
ফ্রান্সে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে ৬ জুন। রাজধানী প্যারিস থেকে শুরু করে দেশটির প্রধান শহরগুলোতে ঈদের নামাজ ও পশু কুরবানি যথাযোগ্য ধর্মীয় রীতি ও আইন মেনে উদযাপিত হয়েছে।
৬ জুন ৫ মিলিয়নেরও বেশি মুসলিম বাসিন্দার আবাসস্থল ফ্রান্সে এবারের ঈদ উদযাপনে ছিল ঐক্যের বার্তা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সামাজিক সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদে ঈদের নামাজ: প্যারিসের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় প্রথম জামাত শুরু হয়। মুসল্লিরা ভোরের প্রথম আলোয় ভেঙে আসা নির্জনতা কাটিয়ে ঈদের নামাজের জন্য একত্রিত হন। সকাল সোয়া ৮টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্যান্ডেমিক পরবর্তী সময়ে এতো সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি ছিল বিরল। মসজিদের বড় হল, প্রাঙ্গণ, এবং আশপাশের রাস্তাগুলো মুসল্লি ভরে ওঠে। ফ্রান্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূতসহ মুসলিম দেশগুলোর কূটনীতিকেরা এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন।
কুরবানির বিধি ও সামাজিক পরিবর্তন: ফ্রান্সের সরকার পশু কুরবানির ক্ষেত্রে পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণে কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করে। বাড়িতে পশু কুরবানির অনুমতি না থাকায়, মুসলিম সম্প্রদায় সরকারি অনুমোদিত স্লটারহাউসে পশু কুরবানি করেছে। এর ফলে কুরবানির প্রথায় কিছু পরিবর্তন আসলেও, ধর্মীয় আচার পূর্ণ মাত্রায় পালন হচ্ছে।
ফরাসি মুসলিম নেতারা নবীন প্রজন্মকে সচেতন করে বলেছেন, পশুদের যথাযথ যত্ন এবং পরিবেশ রক্ষায় এই নিয়মের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরবানির পশুর স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সমন্বয় ছিল ফলপ্রসূ।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা: প্যারিস ও আশেপাশের অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি মুসলিম ঈদ উদযাপনে ব্যাপক অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য মেনে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনা, কোরবানির অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
স্থানীয় কমিউনিটি নেতারা জানিয়েছেন, ঈদ শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হয়।
সামাজিক সম্প্রীতি ও ফরাসি সমাজে গ্রহণযোগ্যতা: ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরের নাগরিক, মুসলিম সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। অনেক ফরাসি নাগরিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ফরাসি কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন বার্তায় সহিষ্ণুতা ও ঐক্যের আহ্বান জানায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফ্রান্সে ধর্মীয় সহাবস্থানের এই চিত্র মুসলিম ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও শান্তির প্রতীক। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সামাজিক সংহতি ও পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি পায়।
ফ্রান্সে বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠিত দুটি মসজিদ রয়েছে৷ তার মধ্যে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারটি বৃহত্তর প্যারিসের স্তা শহরে অবস্থিত। সেটিতে সকাল থেকে ৫-৬টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদুল আজহার ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য: ঈদুল আজহা বা কুরবানি ঈদ মুসলিম বিশ্বে ঈমান ও ত্যাগের প্রতীক। এটি ইব্রাহীম (আঃ) এর আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও ত্যাগের স্মরণ করে পালন করা হয়। পশু কুরবানি দ্বারা দান ও সাহায্যের মর্মার্থ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মানবতার সেবায় উৎসর্গ করা। ফ্রান্সে ঈদ উদযাপন মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ঐক্যের জীবন্ত প্রমাণ।
ঈদুল আজহার পবিত্রতা, সামাজিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিলনে ফ্রান্সের মুসলিম সমাজ সত্যিই অসাধারণ এক ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক সম্প্রীতি, সবকিছুতেই তাদের সংহতি স্পষ্ট।