ফেনী জেনারেল হাসপাতালের নার্সরাও আক্রান্ত হয়েছেন ডায়রিয়ায়। গতকাল হাসপাতালে ডায়রিয়াসহ মোট রোগী ছিল ৪৬৮ জন।
বন্যার পর থেকে ফেনীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। অনেকে ঘরেও চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে আক্রান্ত রোগীর ৯০ ভাগই শিশু বলে জানান চিকিৎসকেরা।
২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মোট শয্যা ১৮টি; কিন্তু গতকাল শুক্রবার বেলা একটা পর্যন্ত এখানে ডায়রিয়ার রোগী ছিল ১৫৬ জন। অর্থাৎ শয্যার আট গুণ বেশি ডায়রিয়ার রোগী। এমনকি হাসপাতালের নার্সরাও আক্রান্ত হয়েছেন ডায়রিয়ায়। গতকাল হাসপাতালে ডায়রিয়াসহ মোট রোগী ছিল ৪৬৮ জন।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল বলেন, বন্যা–পরবর্তী ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। খাওয়ার পানি ও খাবার থেকে মূলত এটা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা করে মেঝেতে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাসপাতালটি ২২ আগস্ট থেকে পানিতে ডুবে ছিল। দুই দিন আগে পানি নেমেছে। নিচতলার প্রতিটি কক্ষ ডুবে ছিল। অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ওষুধপত্রও। পানি নামার পর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি রোগীর সেবাও চলছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিও পানিতে ডুবে গিয়েছিল। এখন পরিষ্কার করে ওখানেই রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বন্যার কারণে আমার কয়েকজন নার্স আসতেও পারেননি। এখন ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
মোমেনা বেগম, সেবা তত্ত্বাবধায়ক, ফেনী হাসপাতাল
গতকাল সরেজমিনে ওয়ার্ডটিতে দেখা যায়, যত্রতত্র রোগী। শিশুদের এক শয্যায় দুজন করে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ ওয়ার্ডের বাইরে বসে আছেন বাচ্চা কোলে নিয়ে। চিকিৎসার জন্য বাচ্চা কোলে বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন আরও অনেকে।
নাজির রোড এলাকা থেকে গতকাল সকালে দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে আসেন ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মেয়েটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এখন নিরুপায় হয়ে এখানে আসছি। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।’
শুধু সদর উপজেলা নয়, দূরদূরান্তের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। দুই মাস বয়সী রাসেলকে ফুলগাজী থেকে নিয়ে এসেছেন মো. সুমন। তিনি বলেন, ‘ঘরে পানি ওঠে ২১ তারিখ (২১ আগস্ট)। আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। গতকাল ঘরে যাই। আশ্রয়কেন্দ্রেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় ছেলেটি। এখন না পেরে এখানে নিয়ে এসেছি।’
হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক মোমেনা বেগম বলেন, ‘বন্যায় ২২ আগস্ট হাঁটুপানি ভেঙে আমি হাসপাতালে এসেছি; কিন্তু যাওয়ার সময় পানি কোমরসমান হয়। তখন একটা নৌকাকে অনুরোধ করেও বাসায় ফিরতে পারিনি। বন্যার কারণে আমার কয়েকজন নার্স আসতেও পারেননি। এখন ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।’
হাসপাতালটির নার্স কুলসুম আকতার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া আরও একজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে বাসায় আছেন বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ছয়টি উপজেলা নিয়ে ফেনী জেলা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও সেগুলো মূলত পানিতে তলিয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পুরোদমে চিকিৎসাসেবা শুরু হয়নি। তবে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম চলছে বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন।
জেলা সিভিল সার্জন মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, ডায়রিয়ার চাপ খুব বেশি। উপজেলা, জেলা সব হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। ডায়রিয়ার স্যালাইন এবং ওআরএসের সংকট আপাতত তেমন নেই। তবে আরও জোগান দরকার। সদর হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২২ জন ভর্তি হয়েছেন।
বন্যায় ২২ আগস্ট হাঁটুপানি ভেঙে আমি হাসপাতালে এসেছি; কিন্তু যাওয়ার সময় পানি কোমরসমান হয়। তখন একটা নৌকাকে অনুরোধ করেও বাসায় ফিরতে পারিনি। বন্যার কারণে আমার কয়েকজন নার্স আসতেও পারেননি। এখন ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক মোমেনা বেগম