পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে পর্যটক শূন্য রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে গত ৮-৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের রাঙামাটিতে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে।পর্যটক আগমনের এমন ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়িতে মামুন নামে এক যুবককে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালি সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনায় দুই জেলায় চারজন নিহত ও অসংখ্যজন আহত হয়েছিল। সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছিল।
স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে।
পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে রাঙামাটিতে আশির দশকের শেষের দিকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে অসংখ্য হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, স্থানীয় তাঁত শিল্প, ট্যুরিস্ট বোট, রেস্তোরাঁ ও সেগুন কাঠের আসবাবপত্রের দোকানসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এখানকার মূল ব্যবসা গড়ে উঠেছে পর্যটকদের উপজীব্য করে। এসব ব্যবসার ওপর এখানকার মানুষের জীবনমান নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে রাঙামাটি গত ২৪ দিন ধরে পর্যটক শূন্য রয়েছে। পর্যটক না থাকায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটক না থাকায় ব্যাংক ঋণের টাকাও তারা পরিশোধ করতে পারছেন না। গুণতে হচ্ছে শত কোটি টাকার লোকসান। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বার্গি লেকের স্বত্বাধিকারী সুমেধ দেওয়ান বলেন, বর্তমানে পর্যটক মৌসুম চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো পর্যটক নেই। দীর্ঘদিন পর্যটক না আসায় আমাদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
রাঙামাটি হাউস বোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পর্যটন খাতে আমাদের কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। পর্যটক না থাকায় আমরা বেশির ভাগ কর্মচারী ছাঁটাই করে দিয়েছি। লোকসানের পাল্লা এত ভারি যে সামনে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হবে।
রাঙামাটি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ বলেন, জেলা শহরে আমাদের শতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রতি হোটেলে গড়ে আমাদের দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা করে লোকসান হলেও পাঁচ লাখ টাকা প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে। আমরা আর পারছি না। অচিরেই পর্যটক আসার পথ উন্মুক্ত করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
হোটেল সাংগ্রাইয়ের স্বত্বাধিকারী মো. সুমন বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ খাতে লগ্নি করেছি। পর্যটক নেই, ব্যবসা নেই। কীভাবে ব্যাংক ঋণ শোধ করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুমে নেই।
রাঙামাটি রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তনয় দেওয়ান বলেন, পুরো মৌসুমে আমরা শত কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারতাম। যত বিপদ পর্যটন খাতে এসে পড়ে।
এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যত সমস্যা থাকুক পর্যটন খাতে কোনো সমস্যা থাকে না। আমরা চাই উন্নত দেশের মতো এ ধরনের সিস্টেম এখানে চালু থাকুক। যেখানে সমস্যা প্রশাসন কথা বলে সমাধান করুক। এভাবে পর্যটক আসা বন্ধ থাকলে আমরা পথে বসে পড়বো।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, গত ৩৫ দিন ধরে সাজেকে পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। লোকসান এত বেড়ে যাচ্ছে অনেক উদ্যোক্তা সাজেক ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। কারণ তারা এত লোকসান দিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা জরিপ করেছি, এর মধ্যে ১২ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অচিরেই সাজেকে পর্যটক প্রবেশে করতে না পারলে আমরা দেউলিয়া হয়ে যাবো।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করে এখানকার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। পর্যটক না থাকায় ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার লোকসান গুণছে। এভাবে চলতে থাকলে এখানকার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি। প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আবারও পর্যটক আগমন স্বাভাবিক হলে ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আরও কিছুদিন এভাবে থাকলে ব্যাংক ঋণের বোঝা নিয়ে এসব ব্যবসা অচিরেই গুটিয়ে যাবে। এজন্য পর্যটকদের আগমনে প্রশাসনের সহযোগিতা ছেয়েছেন তারা।