নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেছেন, একটি দেশে নাটক, গান, চিত্রকলা বন্ধ হলে কী থাকে! একটি চক্র দেশকে সেদিকে নিয়ে যেতে পারে। নাট্যকর্মীদের এসব প্রতিরোধ করতে হবে। নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য চলাকালে সমাবেশে ডিম ছুড়ে মারা হয়।
আজ শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সামনে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে। ২ নভেম্বর শিল্পকলায় প্রদর্শনীর মাঝপথে একটি নাটক বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে এই সমাবেশ ডাকা হয়েছিল।
বিকেল পাঁচটার দিকে ফেডারেশনের সমাবেশে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে ১৫ নভেম্বর নাট্যকর্মীরা সারা দেশে প্রতিবাদ সভা করবেন বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
ডিম ছুড়ে মারার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একদল লোক এসে নাট্যকর্মীদের ধাওয়া দেন। ধাওয়াকারীরা ‘ভারতের দালাল’, ‘ছাত্রখুনি’ বলে স্লোগান দেন। এ সময় তাঁরা সমাবেশের ব্যানার খুলে ফেলতে বলেন এবং শিল্পকলার ভেতরে চলা নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলেন বলে জানান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ।
কামাল বায়েজীদ বলেন, তাঁরা এগিয়ে গিয়ে ওই লোকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, নাট্যকর্মীরাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু আরও লোক এসে জড়ো হন। সংখ্যায় ৫০ থেকে ৬০ জন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুই পক্ষের মাঝখানে এসে দাঁড়ান। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে স্লোগান দেওয়া লোকেরা চলে যান। রাত নয়টায় শিল্পকলার সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।
সমাবেশস্থলে উপস্থিত একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি বলেন, শুরুতে হামলাকারীরা কয়েকজন ছিলেন। পরে আরও অনেকে আসেন। তাঁরা ইটপাটকেলও ছুড়ে মারেন।
এর আগে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে মামুনুর রশীদ বলেন, যাঁরা মঞ্চে নাটক করেন, তাঁরা গাঁটের পয়সা খরচ করে নাটক করেন।
এটা স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠা একটি শিল্প। হৃদয়ের কথা, মানুষের কথা বলার দায়িত্ববোধ থেকেই নাট্যকর্মীরা কাজটি করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, ২ নভেম্বর যা হয়েছে, তা ১৮৭৬ সালে ঘটেছিল। কলকাতায় ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্চে উঠে নাটক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কারণ, তা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ছিল; কিন্তু এখানে তো সরকারের বিরুদ্ধে কিছু হচ্ছে না।
সমাবেশে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাকী ইনাম বলেন, দেশের থিয়েটারগুলো যেন নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে, এ ব্যাপারে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
নাট্যকর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। নিজ দলের নাটক বন্ধ হওয়া নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে দেশ নাটকের দলপ্রধান নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, অনুকম্পা নয়, সঠিক তদন্ত করতে হবে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ প্রমুখ।