‘আমরা মোট ২৪ হাজার ১২২ টাকা জমা দিয়েছি। এই টাকা গত তিন দিনে আমরা বান্ধবীরা মিলে সংগ্রহ করেছি। এই টাকার বেশির ভাগই রিকশাচালকদের।’
রূপনগর এলাকায় পল্লবী ডিগ্রি কলেজের মুক্তা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বন্যার্তদের জন্য নগদ অর্থ সংগ্রহের বুথে নিজেদের সংগৃহীত অর্থ জমা দিয়ে জানালেন এ কথা। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কাছে মুক্তাসহ মিরপুর-১ নম্বর এলাকার তিন শিক্ষার্থী নগদ অর্থ জমা দেন। তাঁরা অনেক কয়েনও জমা দেন
বেলা যত গড়িয়েছে, ত্রাণসহায়তা দিতে আসা মানুষের উপস্থিতি ততই বেড়েছে। তাঁদের কেউ কেউ বন্যার্তদের সহায়তায় নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী নগদ অর্থ ত্রাণসংগ্রহের বুথে জমা করছেন, কেউ কেউ ওষুধ, শিশুখাদ্য ও কাপড়ের মতো ত্রাণসামগ্রী ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা পিকআপে করে নিয়ে আসছেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজ বেলা ১১টার দিকে টিএসসিতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করতে আজও টিএসসিতে গণ ত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ এই কর্মসূচির নবম দিন। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার্তদের জন্য গণ ত্রাণ সংগ্রহে টিএসসির ফটকে বুথ বসিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নগদ অর্থ তুলে দিচ্ছেন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের হাতে। এসব অর্থ কেউ কেউ নিজের আয় কিংবা সঞ্চয় থেকে দিচ্ছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরা মিলে উত্তোলন করা অর্থ তহবিলে জমা দিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক পাড়া-মহল্লায় শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে যে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন, সেই অর্থও তাঁরা জমা দিয়ে যাচ্ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিএসসিতে নগদ অর্থ সংগ্রহের বুথের সামনে মানুষের জটলা বাড়তে দেখা গেছে।
ধামরাইয়ের একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীরা টিএসসির বুথে ২৮ হাজার টাকা জমা দেন। কর্মীদের একজন রেজাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার্তদের সহায়তা করতে আমরা আমাদের কারখানার সামনে একটি বক্স রেখে দিয়েছিলাম। সেখানে সবাই সবার সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করেছেন। ওই টাকা এখানে জমা দিয়ে গেলাম। আমরা চাই, সঠিক জায়গায় আমাদের এই ক্ষুদ্র সহায়তা পৌঁছাক।’
নগদ অর্থসহায়তার পাশাপাশি অনেকে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা পিকআপে করে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসহায়তা নিয়ে টিএসসিতে আসছেন। এর মধ্যে শুকনা খাবার, শিশুখাদ্য, কাপড়চোপড় ও ওষুধ রয়েছে। পাশাপাশি টিএসসির ভেতরে গত কয়েক দিনে যে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেসব ত্রাণ গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানোর জন্য। পণ্য ওঠানোর কাজে সহায়তা করছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা। শিশু-কিশোর, নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদেরও এই কাজে সহায়তা করতে দেখা গেছে।
বনশ্রীর সি ব্লকের বাসিন্দা সেলিম আলমগীর দুপুর ১২টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে সাত বস্তা ত্রাণ নিয়ে টিএসসিতে যান। বস্তাগুলোতে কাপড়সহ স্যালাইন ও গুঁড়া দুধ রয়েছে। এর আগে গত শুক্রবারের কাপড়, শুকনা খাবার, ওষুধ ও পানি দিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানালেন তিনি।
সেলিম আলমগীর বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ যেন সমুন্নত থাকে। শুধু বন্যা নয়, যেকোনো দুর্যোগে সবাই যদি এক থাকি, ঐক্যের শক্তিতে যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের বিজয় হবে।’ নিজের পরিবারের আয়ের পাশাপাশি তাঁর মেয়েরা তাদের বান্ধবীদের নিয়ে যে টাকা তুলেছেন, সেগুলো মিলিয়েই এ সহায়তা আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
টিএসসির নগদ অর্থ জমা দেওয়ার বুথের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রকিব মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু টিএসসির নগদ অর্থ জমা দেওয়ার বুথ থেকেই গত আট দিনে (২২-২৯ আগস্ট) সাত কোটির বেশি টাকা বন্যার্তদের সহায়তার জন্য উত্তোলন করা হয়েছে।