গাজীপুর মহানগরের একটি রিসোর্টে অবৈধভাবে রাখা একটি কুমির উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মহানগরের নীলেরপড়া এলাকার ‘পাখির স্বর্গ’ নামে রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে লোনাপানির কুমিরটি উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংগঠনের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, পাখির স্বর্গ রিসোর্টে একটি কুমির আছে। কুমিরটির বয়স আনুমানিক ২০ বছর। খবর পেয়ে গাজীপুর সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেভ ওয়াইল্ড লাইফ এবং নেচারের (সোয়ান) সদস্যরা কুমিরটি উদ্ধার করেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কুমিরবেষ্টনীতে কুমিরটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী, লোনাপানির কুমির কোথাও আটকে রাখা যাবে না। আমরা এখান থেকে যে কুমিরটি উদ্ধার করেছি, এটি লোনাপানির কুমির, যা প্রায় ২০ বছর আটকে রাখা হয়েছিল। উদ্ধার করা কুমিরটি গাজীপুরের শ্রীপুরে সাফারি পার্কে বিচরণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।’
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিসোর্টে আসা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই লোনাপানির কুমিরটিকে অবৈধভাবে একটি জলাধারে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, বন বিভাগের অনুমতি ব্যতীত এভাবে কুমির পালন অবৈধ।
পাখির স্বর্গ নামের রিসোর্টটির ব্যবস্থাপক মো. রুবেল মুঠোফোনে বলেন, এই রিসোর্টের মালিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া রব। রিসোর্টটি দেখাশোনা করেন তানিয়া রব। তিনি আরও বলেন, ‘কুমিরটি রাখার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের ছিল। আমরাই বেশ কিছুদিন আগে চিড়িয়াখানায় জানিয়েছিলাম, এটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
কুমিরটি উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন সেভ ওয়াইল্ড লাইফ ও নেচারের (সোয়ান) সভাপতি আদনান আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের দুজন সদস্য কয়েক দিন আগে জানতে পারেন, ওই রিসোর্টে একটি কুমির আটকে রাখা হয়েছে। পরে তাঁদের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গত সোমবার সরেজমিনে ওই রিসোর্টে তদন্ত করি। বিষয়টি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের নিয়ে আজ সকালে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শুরুর সময় আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তাঁদের কাছে যেহেতু কোনো অনুমোদন নেই, তাই বন বিভাগ কুমিরটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
তানিয়া রব বলেন, ১৯৯৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর অনুমতি নিয়েই কুমিরসহ বিভিন্ন পশুপাখি তাদের পার্কে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা করতে না পারায় বেশকিছু পশুপাখি মারা যায়। শুধু কুমিরটাই ছিল। তাঁরা চেয়েছিলেন কুমিরটি মিরপুর চিড়িয়াখানা অথবা অন্য কোথাও দিয়ে দিতে। তিনি দাবি করেন, ‘আমি কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও এটা নিতে যারা এসেছিলেন তারা সেগুলি দেখেননি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে একটি কুমির উদ্ধার করা হয়েছে। এটি স্ত্রী কুমির। বেলা সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কুমিরবেষ্টনীতে এটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।