রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মতো আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি অংশ চাকরি জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। দাবি আদায়ে সচিবালয় ঘেরাও করে রাখার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। তাতে আহতও হয়েছেন অনেকে।
বাহিনীটির ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে তারা সচিবালয় ও বাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছিল। অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করা আনসারদের চাকরি স্থগিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের কাছ থেকে সব অস্ত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন না করলেও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অবৈধভাবে ঘেরাও প্রবেশ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন ও রমনা থানায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। মামলায় ৩৭৫ জন আনসার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশকিছু গ্রুপ ছিল। যেখানে প্রত্যেক আনসার সদস্যকে বাহিনীর পোশাক পরিহিত হয়ে আসার পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি পোশাক নিয়ে আসতে বলা হয়। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, আনসারের পোশাকে আন্দোলনে বহিরাগতরা ছিল। এই তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এমনকি আমি নিজেও বিভিন্ন গ্রুপে এমন নির্দেশনা দেখেছি।
তিনি বলেন, সচিবালায়ে আনসার সদস্যরা অবস্থান নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেন। এমনকি সেই আলোচনায় আন্দোলনরত আনসারদের সমন্বয়করা ছিল। আলোচনা শেষে তাদের দাবি মানার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাই। একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তারা বাইরে এসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু সেখানে বহিরাগতরা থাকায় আন্দোলন থেকে সরে আসছিল না। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে, আসলে তাদের উদ্দেশ্য অন্য কিছু। এমনকি সমন্বয়করা বিষয়টি স্বীকারও করেছে যে তাদের ঘোষণাও মানা হচ্ছিল না। এমনকি এসব আন্দোলনে নানা অপকর্মের কারণে চাকরি হারানো আনসার সদস্যরাও ছিল না। আন্দোলনটা শুরুতে আনসারদের থাকলেও পরবর্তীতে এটা অন্য কারো হাতে চলে যায়।
তবে আনসারদের দাবি যৌক্তিক ছিল উল্লেখ করে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য কমিটিও গঠন করেছিলাম। কিন্তু তারা সব কিছুর বাইরে যেয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব ফেলে আন্দোলনে যাওয়া আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ডিজি মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, আনসার সদস্যরা দেশের বিমানবন্দরসহ কেপিআইভুক্ত স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। অথচ তারা সেই সব স্থাপনা অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে আন্দোলনে এসেছেন। এছাড়া শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করার সুযোগ নেই। ফলে শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে তারা যে কাজটি করেছে তাদের আনসার বাহিনীর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে তাদের কাছ থেকে সব অস্ত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ অবাধ্য কারও হাতে অস্ত্র থাকলে সেটি দেশ ও জাতির জন্য ঝুঁকির কারণ। কর্মস্থল ত্যাগ করা আনসারদের চাকরি স্থগিত করা হয়েছে। কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা কর্মস্থলে ফেরেননি তাদের পলাতক হিসেবে ধরা হয়েছে। যারা সাধারণ আনসারদের ইন্ধন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ জেলায় ২৯ হাজার আনসার সদস্য নিয়োগের তথ্য সঠিক নয়। প্রতিটি জেলার আলাদা আলাদা সংখ্যা নির্ধারিত থাকে। তাই বেশি নিয়োগের সুযোগ নেই। তাই প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। গোপালগঞ্জ জেলা থেকে নিয়োগ পাওয়া আনসারদের সংখ্যা ১৩০০।