লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তারবিহীন যোগাযোগের যন্ত্র পেজার ও রেডিও বিস্ফোরণের পর বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে এই হামলা চালায় ইসরায়েল। আর এটিকে গত এক বছরের মধ্যে দেশটিতে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চালানো এই অভিযানে তাদের যুদ্ধবিমানগুলো দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ লেবাননে শত শত মাল্টিপল রকেট-লঞ্চার ব্যারেলে আঘাত হেনেছে। আইডিএফের দাবি, রকেটগুলো কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হতো।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর দক্ষিণ লেবাননে ৫২টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের তিনটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, হিজবুল্লাহর ওপরে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তারা বলেছে, বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে তাদের চালানো হামলায় প্রায় ১০০টি রকেট লঞ্চার ও দক্ষিণ লেবাননের অন্যান্য লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস হয়েছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার এক টিভি ভাষণে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, মঙ্গলবার ও বুধবার ডিভাইস বিস্ফোরণের ঘটনার মাধ্যমে ইসরায়েল সব রেড লাইন অতিক্রম করেছে। এই আক্রমণগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বা যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
পেজার ও রেডিও বিস্ফোরণের বিষয়ে ইসরায়েল সরাসরি মন্তব্য করেনি। যদিও নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, হামলাটি সম্ভবত ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
এছাড়া জাতিসংঘে লেবাননের মিশন বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছে, ইসরায়েল ইলেকট্রনিক বার্তা ব্যবহার করে ও লেবাননে পৌঁছানোর আগে এগুলোতে বিস্ফোরক রাখার মাধ্যমে ডিভাইসগুলোর বিস্ফোরণের জন্য দায়ী।
ইসরায়েলের পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সংকটের কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব এবং সেটিই জরুরি। এছাড়া ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনও। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়ের এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সংঘাত ও উত্তেজনার ‘সম্ভাব্য বৃদ্ধির বিষয়ে ভীত এবং উদ্বিগ্ন’ যুক্তরাষ্ট্র।
লেবাননের এই বিস্ফোরণ নিয়ে শুক্রবার ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন’ ও ‘প্রযুক্তিগত যুদ্ধ’ বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছেন।
হিজবুল্লাহর যোগাযোগের যন্ত্রে বিস্ফোরক বসিয়ে ইসরায়েলের সমন্বিত হামলায় দু’দিনে লেবাননে অন্তত ৩৭ জন নিহত ও আরও তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। মূলত যোগাযোগের যন্ত্রে ইসরায়েলের হামলার পর লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।