সেসময় ইউটিউব ছিল না। বিশ্ববিখ্যাত পপতারকা মাইকেল জ্যাকসন তখন বাংলাদেশেও জনপ্রিয়। ‘ঢাকা ৮৬’ সিনেমার ‘আউল বাউল লালনের দেশে মাইকেল জ্যাকসন আইলো রে, আরে সবার মাথা খাইলো রে’ গানটি সেকথাই মনে করিয়ে দেয়। অন্যদিকে সারা পৃথিবীতে রীতিমতো উন্মাদনার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন কিংবদন্তিসম এই সংগীত তারকা। হয়ে উঠেছিলেন প্রায় সব শ্রেণির মানুষের চোখের তারা। আজ (২৯ আগস্ট) বিশ্বসংগীতের এ মহাতারকার ৬৬তম জন্মদিন।
লালনের দেশ, মানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে মাইকেল জ্যাকসন সশরীরে না এলেও গানের মাধ্যমে এসেছিলেন। তার গান যখন এদেশের মানুষের কাছে পৌঁছেছে, সেই সময়ে এ দেশের ঘরে ঘরে টেলিভিশন পৌঁছায়নি। ইন্টারনেটের কথা তো কল্পনাও করা যায়নি। সেই সময়ে একজন বিদেশি শিল্পী ভিন্ন মেজাজ ও সংস্কৃতির গান নিয়ে এ দেশের মানুষের ‘মাথা খাওয়া’র মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
তখনকার দিনের মানুষ আজকের মতো সহজে বিদেশি গান, সিনেমা সহজে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। ‘বিজাতীয় কলচার’ বলে এসব থেকে মানুষ এক রকম দূরেই থাকতো। ঠিক সেই সময়ে মাইকেল জ্যাকসনকে আপন করে নিয়েছিল এদেশের সংগীতপ্রেমী তরুণরা। বাংলাদেশের ব্যন্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চু একবার এক সাক্ষাৎকারে মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ঢাকার কোনো রিকশাওয়ালাকেও যদি জিজ্ঞেস করা হয় একজন বিদেশি শিল্পীর নাম বলুন, সে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলবেন মাইকেল জ্যাকসন।’
পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার এত বছর পরও ‘মাইকেল জ্যাকসন’ শুধু একটি নাম নয়। বিশ্বসংগীতে একটি বিস্ময়কর ইতিহাস। তিনি নৃত্যেও যোগ করেছিলেন নতুন মাত্রা, যেগুলো ‘মুনওয়াক’, ‘অ্যান্টি গ্র্যাভিটি লিন’সহ জনপ্রিয় নাচের মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি পায়। এভাবে কেবল একজন সংগীতশিল্পীই নন, নৃত্যশিল্পী হিসেবেও সমাদৃত ছিলেন তিনি। নাচ আর গানের মিশেলে নিজেকে তিনি আলাদা করেছিলেন বিশ্বের সব সংগীতশিল্পীদের মধ্যে। কেবল নিজের সময়েরই মহাতারকা ছিলেন না, এখন পর্যন্ত তার গানের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারেননি কোনো শিল্পী।
‘কিং অব পপ’ অর্থাৎ পপ সংগীতের রাজা বলে ডাকা হয় মাইকেল জ্যাকসনকে। ১৯৫৮ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে সংগীত, নৃত্য এবং ফ্যাশন দুনিয়ায় ভীষণ প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি। চার দশকেরও বেশি সময় তিনি ব্যস্ত রেখেছিলেন এই তিন অঙ্গনকে। তার ফ্যাশন স্টাইল দুনিয়াজুড়ের তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় ছিল।
মাইকেল জ্যাকসন মাত্র ১৩ বছর বয়সে এককভাবে গানের জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘বেন’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে তার পরবর্তী অ্যালবাম ‘অফ দ্য ওয়াল’ প্রকাশিত হয়। এর ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট অ্যানাফ’ ও ‘রকিং উইথ ইউ’ গানদুটির মাধ্যমে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মাইকেল জ্যাকসনের সবচেয়ে বিক্রি হওয়া অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘থ্রিলার’, ‘ব্যাড’, ‘ডেঞ্জারাস’ এবং ‘হিস্ট্রি’। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’ সর্বোচ্চ বিক্রিত অ্যালবাম।
মাইকেল জ্যাকসনের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা। বানাচ্ছেন ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’ সিনেমার প্রযোজক গ্রাহাম কিং। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে সম্প্রতি এ তথ্য জানা গেছে। ২০০৯ সালের ২৫ জুন মারা যান এই কালজয়ী তারকা। তার মৃত্যু নিয়ে আজও ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে প্রচার আছে, দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর খবরে গুগল, টুইটার ও এওএলের (আমেরিকা অনলাইন) সাইটে ধস নেমেছিল। এতে অনেকটা সময় বন্ধ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।