যেসব মার্কিন নাগরিকের ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) নামক প্রজননপদ্ধতিতে চিকিৎসা নেওয়া দরকার, তাঁদের সবাইকে বিনা মূল্যে এ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এমন সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তবে কীভাবে এর খরচ মেটানো হবে, তা বলেননি ট্রাম্প।
২০২২ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের অধিকারকে কেন্দ্রীয়ভাবে সুরক্ষা দেওয়ার রায় দেন। তখন থেকে প্রজননের অধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বড় ধরনের বেকায়দার মধ্যে আছেন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। ফেব্রুয়ারিতে আলাবামার একটি আদালতে এ–সংক্রান্ত রুলের পর তাঁর দুর্বলতা আরও বেড়েছে। আদালতের রুলে বলা হয়, আইভিএফ পদ্ধতিতে সৃষ্ট হিমায়িত ভ্রূণগুলোকে মানবসন্তান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
আদালতের সিদ্ধান্তের পর কয়েকটি ক্লিনিকে আইভিএফ সেবা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আইভিএফ সমর্থন করেন।
মিশিগানের পটারভিলে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমি আজ বড় একটি ঘোষণা দিচ্ছি। আর তা হলো আইভিএফ চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সব খরচ ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আপনাদের সরকার কিংবা আপনাদের বিমা কোম্পানি বহন করবে।’
তবে কীভাবে এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবেন কিংবা তহবিল কোথা থেকে আসবে, তা বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেননি ট্রাম্প। তবে এ সমাবেশের আগে এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন ট্রাম্প বলেন, একটি উপায় হতে পারে যে একটি ম্যান্ডেটের আওতায় বিমা কোম্পানিগুলো তা শোধ করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২২ সালে দেওয়া মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায়টি কার্যত অঙ্গরাজ্যগুলোকে ব্যক্তিত্বের প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আইভিএফসহ প্রজনন স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রভাব ফেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মার্কিন নাগরিকদের সবারই যে বিমা পরিকল্পনায় ফার্টিলিটি চিকিৎসার সুযোগ থাকে, এমনটা নয়। এক দফায় আইভিএফ চিকিৎসা নিতে ২০ হাজার ডলারের বেশি খরচ হয়, যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে নতুন মা-বাবারা নবজাতক বাবদ খরচগুলোকে তাঁদের কর বিল থেকে কাটাতে পারবেন। তাঁর দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন পরিবারবান্ধব।
আলাবামার আদালতে ফেব্রুয়ারির রায়ের পর থেকে ট্রাম্প আইভিএফ-এর প্রতি তাঁর সমর্থন ধরে রাখলেও গর্ভপাতের বিষয়ে তাঁকে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা গেছে। গর্ভপাতের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে রাজনৈতিক বিভক্তি থাকা বিষয়গুলোর একটি।
২০১১ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি ‘জীবনের পক্ষে’। ২০১৬ সালে তিনি বলেন, যেসব নারী গর্ভপাত চান, তাঁদের সাজার আওতায় আনতে হবে। অথচ ট্রাম্প এখন বলছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে গর্ভপাতের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়ার পক্ষে অটল থাকা বিচারপতিদের তিনিই নিয়োগ দিয়েছিলেন। এর জন্য কৃতিত্ব নিতে চাইছেন তিনি। আবার নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ফ্লোরিডা গণভোটের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মিশ্র বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফ্লোরিডায় ছয় সপ্তাহের গর্ভাবস্থার পর গর্ভপাতের বিষয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ওই গণভোট আয়োজন করা হচ্ছে।
এনবিসিকে ট্রাম্প বলেন, ‘ছয় সপ্তাহ খুব অল্প সময়, আরও সময় দিতে হবে। আমাদের ছয় সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে, এমন ভোট দিতে যাচ্ছি আমরা।’
এর কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প কীভাবে ভোট দেবেন, সে ইঙ্গিত তিনি দিচ্ছেন না।