
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের আইফোন উৎপাদনে বাধ্য করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে উদ্যোগ নিচ্ছেন, তা বাস্তবায়নে আইনি ও অর্থনৈতিকভাবে বহু জটিলতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্রবার (২৩ মে) ট্রাম্প হুমকি দেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হওয়া আইফোনের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তার প্রশাসনের মূল লক্ষ্য—চীনসহ বিদেশ থেকে উৎপাদন খাত ফিরিয়ে এনে দেশেই কর্মসংস্থান বাড়ানো।
রোবটিক প্রযুক্তির অভাব
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সম্প্রতি সিবিএসকে বলেন,লাখ লাখ শ্রমিক ছোট ছোট স্ক্রু লাগিয়ে যে কাজ করেন, তা এখন যুক্তরাষ্ট্রে এনে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করা হবে, যেখানে মেকানিক ও ইলেকট্রিশিয়ানদের মতো দক্ষ কর্মীরা কাজ পাবেন।
তবে পরবর্তীতে সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুটনিক জানান, অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক তাকে বলেছেন, এমন উচ্চ-নির্ভুলতাসম্পন্ন রোবটিক প্রযুক্তি এখনো অ্যাপলের হাতে নেই। কুক বলেছেন, যেদিন সেই প্রযুক্তি তৈরি হবে, সেদিনই আমি উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসবো।
আইনি ভিত্তি দুর্বল
শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ব্যবহার করতে পারে আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন। এই আইনের অধীনে কোনো ‘অসাধারণ হুমকি’ চিহ্নিত করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেই প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
তবে বিশেষজ্ঞ স্যালি স্টুয়ার্ট লিয়াং বলছেন, নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের জন্য এই আইনে সরাসরি অনুমতি নেই, তবে প্রশাসন হয়তো এটিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করতে পারে।
আইনের ব্যবহার নিয়ে এখন নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে একটি মামলাও চলছে, যেখানে ১২টি রাজ্য ট্রাম্পের আগের ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ককে চ্যালেঞ্জ করেছে।
আইফোনের দাম তিনগুণ হতে পারে
বিশ্লেষক ড্যান আইভসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন উৎপাদনে গেলে তা বাস্তবায়নেই ১০ বছর লেগে যেতে পারে এবং এতে একেকটি আইফোনের দাম দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে এর উচ্চতর মডেলের দাম প্রায় ১ হাজার ২০০ ডলার।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন উৎপাদনের ধারণা একটি রূপকথা, যা বাস্তবে সম্ভব নয়।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ব্রেট হাউসের মতে, আইফোনে শুল্ক বসানো হলে, অ্যাপলের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে, খরচ বাড়বে এবং এর চাপ পড়বে সরাসরি ভোক্তার ওপর। এর কিছুই মার্কিন ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক নয়।