• থাকছে না বিশেষ প্যাকেজ
• বাড়ির দূরত্বের ভিত্তিতে দুটি প্যাকেজ
• প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না খাবার ও কোরবানির খরচ
• বিমান ভাড়া কমছে ২৭ হাজার টাকা
• সুবিধা অপরিবর্তিত প্যাকেজে খরচ কমছে না
• সাশ্রয়ী প্যাকেজে হজযাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা
আগামী বছরের সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন। এর আগে বেলা ১১টায় হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রস্তাব অনুযায়ী, কাবা শরিফ ও মসজিদে নববি থেকে দূরে আজিজিয়া এলাকায় বাড়ি নিয়ে থাকার ক্ষেত্রে হজ প্যাকেজের খরচ হবে প্রায় পৌনে ৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে কাছের বাড়ির ক্ষেত্রে খরচ মোটামুটি গত বছরের সাধারণ প্যাকেজের মতো পৌনে ৬ লাখ টাকার কাছাকাছি। তবে এবার প্যাকেজে খাবার ও কোরবানির খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকছে না বলে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। চলতি বছর খাবার খরচসহ প্যাকেজ করা হলেও কোরবানির খরচ অন্তর্ভুক্ত ছিল না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তারা আরও বলেন, এবার ব্যয়বহুল বিশেষ প্যাকেজ থাকছে না। কারণ গত বছর বিশেষ প্যাকেজ করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
সরকারি প্যাকেজের ওপর ভিত্তি করে মূলত বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনার সাশ্রয়ী প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে বাড়ির দূরত্ব হবে ৩ কিলোমিটার (৩ হাজার মিটার)। এক্ষেত্রে গত বছরের সর্বনিম্ন প্যাকেজ থেকে খরচ কমবে এক লাখ টাকার মতো।
আরেকটি প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো। এক্ষেত্রে বাড়ির দূরত্ব হবে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটার (এক হাজার ৫০০ মিটার)।
বিমান ভাড়া গত বছর থেকে এবার ২৭ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। গত বছর বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা থাকলেও এবার তা কমে প্রায় এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।
গত বছর সাধারণ প্যাকেজে মক্কা ও মদিনায় বাড়ির দূরত্ব ছিল দেড় থেকে দুই কিলোমিটার (এক হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার মিটার)। এবার এ সুবিধার প্যাকেজ মূল্য মোটামুটি একই রকম থাকছে। তবে এবার যে সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে, সেটার খরচ গত বছরের সাধারণ প্যাকেজের খরচ থেকে এক লাখ ৫ হাজার টাকা কমবে। যদিও প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বের বাড়িতে থাকতে হবে, যা হজযাত্রীদের দুর্ভোগের কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রান্তের কিছু খরচ সরকার কমাতে পেরেছে। কিন্তু, টাকার বিপরীতে সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার গত বছরের চেয়ে বেশি। গত বছর এক রিয়ালের বিপরীতে ছিল ২৯ টাকা, এবার তা ৩২ টাকা। একই সঙ্গে সৌদি প্রান্তের খরচও অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই সুবিধা অপরিবর্তিত রেখে হজের খরচ গত বছরের চেয়ে কমানো কঠিন। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। সরকারও খরচ গত বছরের চেয়ে কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়ি ভাড়া ছাড়া খরচ কমানোর বড় খাত নেই। বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা ছাড় দিয়ে প্যাকেজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কাল (বুধবার) হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবো। একটি প্যাকেজ হবে পৌনে ৫ লাখ টাকার মতো। এ প্যাকেজের বাড়ি দূরে হবে। বাড়ির দূরত্ব তিন কিলোমিটার হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি প্যাকেজের খরচ হবে এক লাখ টাকা বেশি। এ প্যাকেজের বাড়ির দূরত্ব হবে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটার। এ প্যাকেজের খরচ হবে পৌনে ৬ লাখের মতো। বিমান ভাড়াও আমরা ২৫ হাজার টাকার বেশি কমাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এছাড়া এনবিআরের একটা খরচ আছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও একটা ফি নেয়- এই দুটি খরচও আমরা কমাতে পারবো।’
সচিব বলেন, প্রতিটি হজ এজেন্সি প্রত্যেক হজযাত্রীর বিমান টিকিট থেকে তিন হাজার টাকা কমিশন নেয়। তারা সেই টাকা ছাড়ের জন্য এখনো রাজি হয়নি। কাল মিটিংয়ে তাদের আবারও বলা হবে। হজ এজেন্সির দুই পক্ষ থেকেই মালিকদের মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে।
‘আমরা যে প্রস্তাব প্রস্তুত করেছি তা নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করবো। সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্যাকেজ চূড়ান্ত হবে’ বলেন ধর্ম সচিব।
আগামী বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হবে হজ চুক্তি।
আগামী বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হচ্ছে। হজ প্যাকেজ মূল্যের বাকি টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নিবন্ধন চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হলেও প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় সাড়া নেই হজযাত্রীদের। তাই এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে প্রায় দুই মাসে নয় হাজার ৩০০ জন (মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত) হজযাত্রী প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন।