যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী কমলা হ্যারিসের উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখা যাচ্ছে। তবে রিপাবলিকানরা বলছেন, এমনটি দীর্ঘস্থায়ী না–ও হতে পারে।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারসংক্রান্ত জরিপ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা টনি ফাবরিজিও একে ‘হ্যারিস হানিমুন পর্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, গণমাধ্যমে ইতিবাচক সংবাদ এবং নিজেদের উদ্যম একসঙ্গে মিলে ডেমোক্র্যাটদের উত্থানে ভূমিকা রেখেছে।
টনি ফাবরিজিও ‘হানিমুন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ক্ষণস্থায়ী সুন্দর সময় অর্থে। অর্থাৎ যার শেষ আছে। কমলা হ্যারিস এবং মার্কিন ভোটারদের মধ্যে এখন যে ইতিবাচক সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে, তাকেই হানিমুন সময় বলছেন ফাবরিজিও।
সম্প্রতি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি প্রার্থী হিসেবে কমলাকে সমর্থন দেন। অর্থাৎ কমলাই এখন দলটির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। বাইডেন নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর নির্বাচনী মাঠে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তা আপাতত কমলা হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটদের আশাবাদী করে তুলেছে। অন্যদিকে বাইডেন থেকে সরে এসে কমলাকেই এখন আক্রমণের নিশানা করছে রিপাবলিকান শিবির।
এখন রিপাবলিকানরা তিনটি বিষয় সামনে এনে কমলার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে।
কমলাকে ‘উগ্র’ বামপন্থী বলছেন ট্রাম্প
২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তিনি পরে প্রার্থিতা পাওয়ার সে প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তার আগপর্যন্ত কমলা যে প্রচার চালিয়েছিলেন, তাতে কিছু ঘাটতি ছিল। তিনি পরিষ্কার কোনো বার্তা দিতে পারেননি। তখন তাঁকে কিছু ভুল ও অসমীচীন কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে। ওই সময় কমলা ছিলেন সিনেটর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা পেতে অন্য অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মতো কমলাও বামপন্থার দিকে ঝুঁকেছিলেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির থিঙ্কট্যাংক ‘থার্ড ওয়ে’র পাবলিক অ্যাফেয়ার্স–বিষয়ক নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট বেনেট বলেন, ‘যখন কেউ প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তখন সাধারণ নির্বাচনের আগমুহূর্তের তুলনায় তাঁর রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো অনেকটাই আলাদা থাকে।’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম জনসমাবেশে কমলা হ্যারিস সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেনএএফপি ফাইল ছবি
২০১৯ সালে বিভিন্ন বিতর্ক ও সাক্ষাৎকারে সরকার পরিচালিত একটি ব্যবস্থার আওতায় বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা বাতিল করার পক্ষে কথা বলেছিলেন কমলা হ্যারিস। তিনি পুলিশ বিভাগে সংস্কারের প্রশংসা করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা খাতের বরাদ্দকে অন্য অগ্রাধিকারের জায়গাগুলোতে স্থানান্তরের কথা বলেছিলেন। নথিভুক্ত না হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা দিয়ে যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকছেন, তাঁদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা না করার পক্ষে কথা বলেছিলেন কমলা। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন এবং শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থাকে (আইস) বিলুপ্ত করার বিষয়টিও তাঁর বিবেচনায় ছিল। গ্রিন নিউ ডিল নামের পরিবেশ আইনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন কমলা।
এখন কমলা হ্যারিসের সে অবস্থানগুলোকেই বিরোধীরা সামনে টেনে এনে আক্রমণ করছে।
পেনসিলভানিয়ায় রিপাবলিকান সিনেটর প্রার্থী ডেভিড ম্যাককরমিক ইতিমধ্যে টেলিভিশনে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এতে ২০১৯ সালে কমলা হ্যারিসের অবস্থানগুলো কেমন ছিল, তা উল্লেখ করে আক্রমণ করেছেন। পেনসিলভানিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক সিনেটর বব ক্যাসিকে ধরাশায়ী করতে ম্যাককরমিক এমন প্রচার চালাচ্ছেন।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে—‘মিট স্যান ফ্রান্সিসকো র্যাডিকেল কমলা হ্যারিস।’ এতে ওই সময়ে কমলা হ্যারিস যেসব নীতিমালাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তার অনেকগুলোই তুলে ধরা হয়েছে।
রক্ষণশীল দলটির ধারাভাষ্যকার ম্যাট ওয়ালশ বলেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকে কীভাবে আক্রমণ করতে হবে তার ‘নীলনকশা’ এটি।
ডেমোক্রেটিক পার্টির কৌশল নির্ধারণে সামনের সারিতে থাকা বেনেট বলেন, ‘তিনি যথাযথভাবে যুক্তি দেখাতে পারেন, ভালো নেতারা নীতিমালা সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান বদলান, নিজেদের নীতি পাল্টে ফেলেন না।’
আর কমলা কাজটি ভালোভাবে করতে না পারলে তিনি দলনিরপেক্ষ এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটারদের সমর্থন হারাতে পারেন। আর গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে এ ধরনের ভোটারদের হাতেই মূলত নির্বাচনের ফল নির্ভর করে।