কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করা শতাধিক পরীক্ষার্থী তাঁদের ফলাফল পরিবর্তন করে পাস ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ১৫ অক্টোবর এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছিল।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে এসে প্রথমে ফেল থেকে পাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে শিক্ষা বোর্ডের নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশের সদস্যরা তাঁদের ফটকে আটকে দিয়ে কয়েকজনকে ভেতরে গিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল মাঠে অবস্থান নেন। সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে করতে তাঁরা শিক্ষা বোর্ডে আসেন।
দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ফেল থেকে পাসের দাবিতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরের মূল ফটকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের হট্টগোলের কারণে বোর্ডে সেবা নিতে আসা মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ফটকের তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে আন্দোলনকারীদের অন্তত ১৫ জনকে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নিজামুল করিমের দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বোর্ডের সচিব অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামানসহ বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এখানে যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন, তাঁদের সবাই এসএসসিতে ভালো ফল করেছেন। কিন্তু এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় তাঁদের উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা হলেও বাকি বিষয়গুলো এসএসসির ফলাফল থেকে ম্যাপিং করা হয়েছে। প্রয়োজনে সব বিষয়ে ম্যাপিংয়ের করে ঘোষিত ফলাফল পরিবর্তন করে তাঁদের পাস দেখানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আসা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী নিহাদ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, ‘যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোতে আমরা সর্বোচ্চ ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। এরপরও আমাদের ফেল দেখানো হয়েছে। আমাদের ধারণা, উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা ভালো পরীক্ষা দিয়েছি, তাই পাসের দাবি জানাচ্ছি।’
জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার জুনাব আলী কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন মুন্সি বলেন, ‘আমি সব বিষয়ে ভালো ফল করেছি। কিন্তু অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েও ইংরেজিতে ফেল করেছি। আমরা বৈষম্যমূলক এই ফলাফল মানি না। এই ফল পরিবর্তন করে আমাদের সবাইকে পাসের দাবি জানাচ্ছি।’ লক্ষ্মীপুরের কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাদ্দাদ হোসেন বলেন, ‘বন্যা ও আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেকে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি। আবার অনেকে ভালো পরীক্ষা দিলেও তাঁদের উত্তরপত্র যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। এ কারণে আমরা আন্দোলনে এসেছি। আমরা সবার পাস চাই।’
শিক্ষার্থীদের দাবি শুনেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, এভাবে আন্দোলন করে ফলাফল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ২২ অক্টোবরের মধ্যে যেসব বিষয়ে ফেল এসেছে, সেসব বিষয়ে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে হবে। কোনো পরীক্ষার্থীর একক কোনো সমস্যা থাকলে, সেটা শিক্ষা বোর্ডের দপ্তরে যোগাযোগ করে এর সমাধান জানতে পারবে। আর সামগ্রিক বিষয়ে লিখিতভাবে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে।
আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের দাবি শুনে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নিজামুল করিম জানান, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত সাতটি বিষয়ের প্রাপ্ত ফলাফল এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের ফলাফল নির্ণয় করা হয়েছে; এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এখানে আসা পরীক্ষার্থীরা দাবি করেছে, এসএসসির ফলাফল থেকে সব বিষয়ে ম্যাপিং করে ফলাফল ঘোষণা করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে বলেছি, আমরা সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আর ফলাফল পরিবর্তন চাইলে তাদের পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে হবে। তাহলে আমরা বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারব। একটি চক্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে উত্তরপত্র পুড়ে গেছে। বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শিক্ষার্থীরা যেটা বলছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সক্ষমতা শিক্ষা বোর্ডের নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
এইচএসসিতে এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫। কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী এই ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড গঠিত। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর এই ৬ জেলার ৪৩৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ১২ হাজার ৩১২ পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭৯ হাজার ৯০৫ জন। এবারের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৯২২ জন।