অবৈধ অভিবাসন নিয়ে মালদ্বীপে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন নিয়ম চালু করেছে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড টেকনোলজি মন্ত্রণালয়। পরিবর্তিত নতুন নিয়মগুলো ডিজিটাল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (এক্সপ্যাট) ব্যবহারকারীদের জন্য এই সিস্টেমের হোমপেজে রূপরেখা জানিয়ে দিয়েছে। এটি রোববার (৬ অক্টোবর) থেকে কার্যকর করা হবে।
মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
এক্সপ্যাট সিস্টেম হলো মালদ্বীপের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ এবং এই অভিবাসী কর্মীদের ভিসা ফি দেশটির সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়। একইসাথে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য কোটারও আবেদন করা হয়।
মালদ্বীপে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। রাজধানী মালেসহ বিভিন্ন দ্বীপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি। কাজের জন্য বেশিরভাগ শ্রমিককে থাকতে হচ্ছে মালের বাইরে বা আইল্যান্ডগুলোতে। যদিও তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই বৈধ কোনো ডকুমেন্টস নেই ।
ধর্মীয় মিল এবং স্বজনদের আধিক্যের কারণে জীবিকার তাগিদে মালদ্বীপে আসা অধিকাংশ বাংলাদেশির প্রবাস জীবন শুরু হয়েছে চরম দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে। এর বড় কারণ দালাল চক্র এবং দেশটির নিয়োগকর্তাদের দেয়া কম বেতন বা অবহেলা। আবার কিছু প্রবাসী বেশি বেতনের আশায় ফ্রি ভিসায় এসেছেন দেশটিতে, কেউবা বাধ্য হয়ে নিয়োগকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করেন বা কোম্পানি থেকে পালিয়ে ভালো বেতনের আসায় অন্য কোনো মালিকানায় কাজ শুরু করেন।
এসব প্রবাসীদের যেমন অবৈধভাবে কাজ করতে হয় দেশটিতে, তেমনি তাদের খুঁজে পাওয়ার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে মালদ্বীপের কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে মিসিং বা পালিয়ে যাওয়ার মামলা করেন। কারণ, এরা কোথাও কাজ করা অবস্থায় যদি পুলিশের কাছে ধরা পড়েন, তাদের জরিমানা গুনতে হবে ওয়ার্ক পারমিট হোল্ডার বা মালিককে। অন্যথায় ওই অভিবাসী কর্মীদের ওয়ার্কিং সাইডগুলো ব্লক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে মালদ্বীপ সরকার দেশটির অভিবাসন কর্মসংস্থানের বর্তমান নিয়মগুলো সংশোধন করে নতুন নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে। এতে করে যদি কোনো অভিবাসীকর্মী তাদের নিজ কোম্পানি থেকে পালিয়ে যায় আর কোম্পানি যদি ওই অভিবাসী কর্মীর বিরুদ্ধে মিসিং মামলা করে, তবে সেই কোম্পানিকে দেশটির সরকারি ফি বাবদ ৬৪.৯ মার্কিন ডলার এবং সংশ্লিষ্ট ভিসা ফি ও জরিমানা পরিশোধ করতে হবে সরকারি কোষাগারে।
এছাড়াও মালদ্বীপের অভিবাসী নিয়োগকর্তাদের অবহেলার কারণে যদি কোনো ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া কর্মী পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কোম্পানিকে ১২৯.৭০ মার্কিন ডলার ফি পেমেন্ট করতে হবে। আবার এই ধরনের মামলাগুলো বাতিল হলে ‘ওয়ার্ক পারমিট মিসিং উইথড্রয়াল সার্ভিস ফি’ হিসেবে সরকারি কোষাগারে ৬৪৮.৫ মার্কিন ডলার পেমেন্ট করতে হবে বলে জানায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এক্সপ্যাট সিস্টেমে আগে যারা মিসিং মামলার জন্য আবেদন করেছেন, তারা যদি পালিয়ে যাওয়া ওই অভিবাসীকর্মীকে খুজে পায়, নতুন এই নিয়মে চাইলে ওই অভিবাসী কর্মীর মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন। এই সুযোগ থাকবে ৬ অক্টোবর থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। তবে যারা বেধে দেয়া এই সময়ের বাইরে মিসিং মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে চাইবে, কেবলমাত্র সাত দিনের একটি অ-চার্জযোগ্য সময় দেয়া হবে, যার মধ্যে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা যেতে পারে। অন্যথায় একই ফি প্রযোজ্য হবে।
প্রসঙ্গত, মালদ্বীপের আইন মেনে অভিবাসীকর্মীদের বসবাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশটির সরকার বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে মালদ্বীপের অভিবাসন বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিয়েমিত বিশেষ অভিযান বা ‘অপারেশন কুরাঙ্গি’ পরিচালনা করছে।