টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড়ধসে ৬ জন নিহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিন জন শহরতলির ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় বাসিন্দা ও তিন জন উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা।
তাঁদের মৃত্যুর তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ।
ভারী বর্ষণে শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবেছে। শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে কয়েক শ দোকানপাটের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে সৈকতে হোটেল মোটেল জোনের ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণ পুরো শহরের আট লাখ মানুষের কর্মজীবন অনেকটাই থামিয়ে দেয়। এমন ভারী বর্ষণ গত ৫০ বছরে দেখেননি কেউ।
ভারী বর্ষণের কারণে শহরের অভ্যন্তরে ১২টির বেশি পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটছে। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে শহরতলির ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় পাহাড়ধসে স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমানের পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন মিজানের স্ত্রী আঁখি মণি (২৮), মেয়ে মিহা জান্নাত (১২) ও লতিফা ইসলাম (৯)। পাহাড়ের পাদদেশে মিজানের বাড়িটি ছিল।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, গতকাল সকাল নয়টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৪০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে (২০২৪) এটি (এক দিনে) সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, আজ সকালে ঝিলংজায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত তিন জনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে নেমেছে।
এমন জলাবদ্ধতা ৫০ বছরে দেখেনি কেউ
গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে পুরো শহর ডুবে গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বেলা ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভারী বর্ষণ নেমেছিল। তাতে শহরের কলাতলী সৈকত সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। সড়কের দুই পাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউসে যাতায়াতের অভ্যন্তরীণ ১৮টি উপসড়কও ডুবে যায়। কয়েক হাজার পর্যটক হোটেলে আটকা পড়েন। কলাতলী সড়ক থেকে সমুদ্রসৈকতে নামার সুগন্ধা সড়কটিও ডুবে আছে। সড়কে হাতে গোনা কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চলাচল করলেও অলিগলিতে ঢুকতে পারছে না।
শহরের ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটারের প্রধান সড়কও পানিতে ডুবেছে। সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার কয়েক শ দোকান, অফিস-আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাহারছড়া এলাকা বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মুফিজুর রহমান (৫৫) বলেন, এমন ভারী বর্ষণ এ জীবনে তিনি দেখেননি। বর্ষণে তাঁর বসতবাড়িসহ পুরো বাহারছড়া ডুবে গেছে।