কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আহ্বানের পরেও তারা থামেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বললাম, আপনারা হতাশ হবেন না। তারপরও তারা থামলো না, আজকে সারাদেশে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেলো এর দায়-দায়িত্ব কার?
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়িতে কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিস গেলে গড়ে তোলা যায়, কিন্তু প্রাণ গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না! যারা আপনজন হারিয়েছে, যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছে, তাদের কষ্ট আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি! কারণ আজকে এ আগস্ট মাস আমি তো বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এ বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম। নিজে ছোট ছোট বাচ্চাদের মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে, কেন? বাংলাদেশের মানুষের জন্য। এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে, স্বাধীনতার সুফল পাবে। প্রত্যেকে পেট ভরে ভাত খাবে, লেখাপড়া শিখবে, দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে। বাংলাদেশ উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে, বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন পাবে। যে মর্যাদা আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পেয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যা আমরা হারিয়েছিলাম, আবার সেই মর্যাদা ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
কাঁদতে কাঁদতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সময়, দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। কারণ আমি জানি, টাইম ইজ ঠু শর্ট! কারণ আমি জানি, যে কোনো সময় আমাকে আঘাত করতে পারে। কারণ আমি বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। যতক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস আছে ততক্ষণ মানুষের জন্য কাজ করবো। সেই যে ১০ বছরের ছেলে আর আট বছরের মেয়ে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে দেশের মানুষের জন্য আনাচে-কানাচে সব ঘুরেছি এবং প্রতিটি জায়গা উন্নত করেছি। প্রতিটি গ্রাম আজকে শহর হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। মানুষের জীবনমান উন্নত করে দিয়েছি। এটা কি অপরাধ? এটা কি আমার অপরাধ ছিল?
‘আজকে নানাভাবে, জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম আর আমি তো আছিই! যখন থেকে আছি তখন থেকেই গালি খাচ্ছি তো খাচ্ছিই। আমি তো পরোয়া করিনি! আমি জানি, আমার আত্মবিশ্বাস নিয়ে সততা নিয়ে কাজ করে গেছি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি,’ যোগ করেন তিনি।
কোটা আন্দোলনে হতাহতের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখানে কারও দাবি অপেক্ষা রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিই। ঘটনা যখন হয় তখন মাত্র ছয়জন মারা গিয়েছিল। এখন আরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। আমি এখন তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে দিয়ে, তাদের কর্মপরিধি আরও দিয়ে…আমি চাই প্রত্যেকটা জিনিসের তদন্ত হোক—কারা এর পেছনে? কে কীভাবে? কী কী ঘটনা ঘটেছে? সে জন্য জাতিসংঘেও আমি আবেদন করেছি, তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। অন্য কোনো দেশ যদি চায় তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। কারণ আমি চাই এ ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্ত হোক, সে যেই দায়ী থাক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের।