
ভালাবাসা, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিশেলে তৈরি প্রেমের সিনেমা ‘আনোরা’। এবারের ৯৭তম অস্কারের মঞ্চে পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে এটি। কী আছে এ সিনেমায় জানেন?
পরিচালক শন বেকারের এ সিনেমার গল্প এগিয়েছে রাশিয়ান এক ধনী গ্যাংস্টারের ছেলে (ভানিয়া) ও আমেরিকান এক স্ট্রিপ ড্যান্সারকে (আনোরা) কেন্দ্র করে।
সিনেমার শুরুতে দেখা যায়, ভানিয়া ঘুরতে আসে আমেরিকায়। এক পাবে সময় কাটাতে এলে পাব মালিক রাশিয়ান গেস্টকে হ্যান্ডেল করতে পাব স্ট্রিপ ড্যান্সার আনোরাকে দায়িত্ব দেন। কারন ড্যান্সারদের মধ্যে আনোরাই একজন যে রাশিয়ান ভাষা বলতে পারে।

এ সিনেমায় আনোরার ডাক নাম থাকে এনি। গল্পে দেখা যায়, তিনি ড্যান্সার হলেও মূলত একজন যৌনকর্মী। আমেরিকা ভ্রমণের পুরো সময় ভানিয়া এ এনির সঙ্গেই থাকতে শুরু করে।
একদিন ভানিয়া আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রসঙ্গে এনিকে বিয়ের কথা বলে। এতে এনি কিছুটা অবাক হলেও রাজি হয়ে যায়। বিয়ের পর নানা স্বপ্ন বুনতে শুরু করে এনি। যৌনকর্ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রথমদিকে এনির মালিক তাতে রাজি হননি। কারণ এনিকে দেখে সব পাব ড্যান্সারই ধনী কোনো ছেলেকে বিয়ে করে এ কাজ থেকে সরে যেতে চাইবে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজি হন তিনি।
এখানে গল্পের হ্যাপি এন্ডিং মনে হলেও মূল গল্পের নতুন মোড় এখান থেকেই শুরু। বিয়ের পর ভানিয়ার বাবা, মার কাছে খবর চলে যায়, এক পতিতাকে বিয়ে করেছে তাদের সন্তান। এ খবর পৌঁছাতেই ভানিয়ার বাবা তোরোস নামের একজনকে আমেরিকায় পাঠায়।

দুইজনকে (গার্নিক ও ইগোর) সঙ্গে নিয়ে তোরোস আমেরিকা পৌঁছিয়ে খুঁজতে শুরু করে ভানিয়া ও এনিকে। এক পর্যায় দেখা যায়, এনিকে একা রেখে ভয় পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ভানিয়া। এরপর গার্নিক ও ইগোরকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে তোরোস পৌঁছায়।
এনি তাদের দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায় ইগোর কান কেটে দেয় আর গার্নিকের নাক ভেঙে দেয় এনি। এরপর গল্পের নায়িকা বাড়ি থেকে তাদের বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু তোরোস জানায়, এটা সম্ভব নয়। কারণ এ বাড়ি ভানিয়ার নয়, ভানিয়ার বাবার।
তোরোস এনিকে জানায়, ভানিয়ার এমন ঘটনা ঘটানোর অভ্যাস নতুন নয়। প্রতিবারই কোনো দেশে ভ্রমণে গেলে এমন কাণ্ড ঘটায় ভানিয়া। যা সামাল দিতে হয় তোরোসকে। এখানে প্রেম নেই বরং ভানিয়ার উন্মাদনাই কাজ করেছে, যা বুঝতে শুরু করে এনি।
সিনেমার শেষ দিকে দেখা যায়, বিয়ে বাতিল করার জন্য প্রাইভেট জেটে করে ভানিয়ার বাবা, মা আমেরিকায় পৌঁছায়। ভানিয়াও মায়ের বাধ্য সন্তানের মতো ডিভোর্স পেপারে সাইন করে। এসময় ইগোর বলে, এনির কাছে ভানিয়াকে মাফ চাইতে। কিন্তু ভানিয়ার মা জানান, এখানে ভানিয়ার মাফ চাওয়ার কোনো কারণই নেই।
ডিভোর্সের পর ইগোর এনিকে নিউইয়র্কে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে যায়। এ সময় দেখা যায়, ইগোর সঙ্গে আলাপ করতে করতে এনি একসময় নোটিশ করে তার প্রতি বেশ যত্নশীল ইগোর। এতে কেঁদে ফেলে এনি। আর কান্নারত এনিকে সামলাতে শুরু করে ইগোর। এভাবেই সিনেমা শেষ হয়ে যায়।
সিনেমায় বাস্তবতার কঠিন সত্য ফুটে ওঠায় হৃদয় ছুঁয়েছে বিচারকদের। কল্পনা আর বাস্তব যে এক নয়, এ সিনেমায় তা ফুটে উঠেছে। এক অন্ধকার জগত থেকে বের হতে ধনী এক পুরুষকে বিয়ে করার যে চেষ্টা থাকে যৌনকর্মীর সে আকুতিও তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে। অন্যদিকে আভিজাত্যে বেড়ে ওঠা ভানিয়া চরিত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালক বোঝাতে চেয়েছেন, এক চরিত্রহীনের কাছে ‘বিয়ে’ নিছকই একটি ছেলে খেলা।
এমন অসাধারণ গল্প ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সিনেমায় রূপ দিয়ে পরিচালক শন বেকার একাই চারটি (সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সম্পাদনা ও সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য) পুরস্কার জেতেন ৯৭তম অস্কারের মঞ্চে। আর আনোরা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ২৫ বছর বয়সী অভিনেত্রী মাইকি ম্যাডিসনও জেতেন অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।