মিশর প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনাপত্তি সনদ, জন্ম সনদ সংশোধন, সত্যায়নপত্রসহ বিভিন্ন কাগজ ভেরিফিকেশনে ভোগান্তির অভিযোগ এনে মিশরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের পদত্যাগ দাবি করেছেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইত্তেহাদ’।
বুধবার (২০ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েপড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, দূতাবাসে সেবা নিতে আসা এক নারী তার ছেলের ভর্তির জন্য নাম সংশোধন করাতে এসে দীর্ঘ চার মাস ঘুরেও সেই চিঠি না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ও দূতাবাসের সামনেই আত্মহত্যা করার হুমকি দেন।
এদিকে দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংগঠন ইত্তেহাদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৫ সাল থেকে মিশরস্থ সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঐক্য প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (ইত্তেহাদ) এর বিভিন্ন প্রস্তাবনা আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের বহুমুখী সেবা সুন্দরভাবে দিয়ে আসছিল এবং ইত্তেহাদের মধ্যস্থতায় দূতাবাস ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছিল। কিন্তু গত ৯ মাস থেকে বৈষম্য ও ভোগান্তির শিকার হতে থাকে মিশরস্থ শিক্ষার্থীরা, বঞ্চিত হতে থাকে নাগরিক অধিকার থেকে। নবাগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাস কর্তৃপক্ষের আচরণ খুবই অমানবিক, এমনকি নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষার্থীরাও আগের পাওয়া বহু জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নবাগত শিক্ষার্থীদের ভর্তি লেটার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলা হয়েছে। কাগজপত্র জমা দিয়ে সময় বিলম্বের কারণে ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অনেকে ভর্তি হতে না পেরে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তাওকিলনামা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, আরবি জন্মনিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, আরবি কাগজপত্র গ্ৰহণ করা হয় না, দূতাবাসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়ন নানা কারণে আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য নিম্নোক্ত দাবিগুলো নিয়ে ইত্তেহাদের নেতারা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেও পায়নি।
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার পর মিশরে বৈষম্য ও ভোগান্তির শিকার শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে ব্যস্ত আছেন বলে লিখিত ই-মেইল করা বা তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ তার দশ মাসের দীর্ঘ সময়ের অজ্ঞাত ব্যস্ততা কাটিয়ে প্রথমবারের মতো ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার প্রয়োজন আনঅফিসিয়াল ইত্তেহাদের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্মতি জানালে সার্বিক বিবেচনায় ইত্তেহাদের দায়িত্বশীলরা (সবার ঐক্যমতে) দীর্ঘ দশ মাস যাবৎ শিক্ষার্থীদের ওপর নানাবিধ ভোগান্তি চাপিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মিশরস্থ প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ইত্তেহাদ মনে করে, এমতাবস্থায় মিশরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বর্তমান রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ নিজ উদ্যোগে পদত্যাগ বা বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বর্তমান অভিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দূতাবাস কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিয়ে দায়িত্ববান রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে মিশরস্থ সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য প্রবাসীদের অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্ৰহণই পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান।
এছাড়াও যেসব শিক্ষার্থী এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দূতাবাসের অনিয়ম-অমানবিকতার কথা তুলে ধরে নিজেদের অধিকার চেয়ে কথা বলেছে তাদের কোনো একজনকেও (দেশে বা বিদেশে) হয়রানি করা প্রকারান্তরে মিশরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে হয়রানিরই শামিল হবে এবং দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে এরূপ কাজের পরিণতি খুবই খারাপ হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইত্তেহাদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিশরস্থ প্রবাসী নেতারা এবং বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এবং সেক্রেটারি জেনারেল সামিনা নাজের পদত্যাগ দাবি করে বাংলাদেশ দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে চলমান রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।