
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে তৃতীয় ধাপে ত্রাণ, মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা হস্তান্তর শেষে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’। এসময় মানবপাচারের শিকার হয়ে মিয়ানমারে আটক ২০ বাংলাদেশি নাগরিককেও দেশে ফিরিয়ে আনে নৌবাহিনী জাহাজ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) নৌবাহিনী জাহাজ দেশে ফেরে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর জানায়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে তৃতীয় ধাপে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা হস্তান্তর শেষে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’। এর আগে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রেরিত ৫৫ সদস্যের উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারীদল এবং বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারে আটকে পড়া ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশে ফেরে।

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে ১২০ টন ত্রাণসামগ্রী যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর শেষে ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে গত ১৩ এপ্রিল মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন বন্দর ত্যাগ করে। এর আগে মিয়ানমারে প্রেরিত উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারীদল তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করে জাহাজে আরোহন করে। গত ৩০ মার্চ ও ১ এপ্রিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, অসামরিক চিকিৎসক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সমন্বয়ে গঠিত ৫৫ সদস্যের উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল মিয়ানমারে প্রেরণ করা হয়।
তারা ধসে পড়া ভবন ক্লিয়ারিং, উদ্ধার এবং জটিল অস্ত্র পাচারসহ দুর্যোগপীড়িত মানুষের সেবায় কাজ করে। বর্তমানে মিয়ানমারে ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় নৌবাহিনীর জাহাজযোগে তাদের নিরাপদে দেশে নিয়ে আসা হয়। মানবিক বিপর্যয়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সে দেশের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
আইএসপিআর আরও জানায়, বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারে আটক থাকা ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ জাহাজের মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তারা প্রায় দুই বছর ধরে মানবপাচারের শিকার হয় মিয়ানমারে আটক ছিল।

উন্নত রাষ্ট্রে প্রেরণ ও চাকরির প্রলোভনে পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে তারা মিয়ানমারে গমন করেছিলেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণদের কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হয়। আটক হওয়ার পর থেকেই তাদের প্রত্যাবাসনে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল।
এমতাবস্থায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মিয়ানমারে পৌঁছালে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া মেলে। সেখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মিয়ানমারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যকার আলোচনায় দুই দেশ সমঝোতায় উপনীত হয়।

ফলে দীর্ঘদিন আটক থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা মুক্তি পান। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় মুক্তিপ্রাপ্ত নাগরিকদের আজ নিরাপদে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত কার্যক্রম শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হস্তান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর।