
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)। জিডিপি কমলেও মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চলতি অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাবে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে এ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমলেও মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগের অর্থবছর (২০২৩-২৪) মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় ৮২ ডলার বেড়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬২ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় আকার দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) জিডিপির আকার ছিল ৪৫০ বিলিয়ন ডলার, দেশীয় মুদ্রায় আকার ছিল ৫০ লাখ ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
বিবিএস দেশের জনসংখ্যা, কৃষি, শিল্প, জনমিতি, অর্থনীতি, আর্থ-সামাজিক বিষয়াদি, প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ, ইত্যাদি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। তন্মধ্যে জিডিপি গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নির্দেশক প্রাক্কলন অন্যতম।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রাক্কলন ও প্রকাশ করা হয়েছিল। এ পর্যায়ে সাময়িকভাবে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করা হয়।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে বিনিয়োগ। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, এ অর্থবছর বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আগের অর্থবছরও তা ছিল ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ।
এছাড়া দেশজ সঞ্চয় কমে ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশে ঠেকেছে, আগের অর্থবছর তা ছিল ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে জাতীয় সঞ্চয় বেড়ে ২৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, আগের অর্থবছর তা ছিল ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরেও সবচেয়ে কম হয়েছে। এর আগের অর্থবছরগুলোতেও কৃষির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ধীরগতির। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির হার ১.৫১ শতাংশীয় পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
তবে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে শিল্পখাতের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সাময়িক হিসাবে সেবা খাতের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।