বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে তিনদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাতক্ষীরাবাসীর জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। অঝর বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শত শত হেক্টর জমির ঘের, ফসলের ক্ষেতসহ জলাভূমি ডুবে গেছে।
সুলতানপুর কাজীপাড়া এলাকার খোকন হোসেন বলেন, বাড়িসহ সড়ক তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, চলাচল করতে গিয়ে মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ছেন।
বিনেরপোতা এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, বিনেরপোতা, গোপীনাথপুর, মাগুরা, খেজুরডাঙ্গা ও তালতলা এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তাও পানিতে ডুবে আছে। মাছের ঘের, ফসলের মাঠ ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
মুনজিৎপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। রাস্তায় পানি জমেছে। প্রতিবছরই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অথচ দেখার কেউ নেই। পৌরসভার ড্রেন দিয়ে পানি না সরে উল্টো খালের পানি এলাকায় আসছে। ফলে জলাবদ্ধতা বাড়ছে।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, সাতক্ষীরা শহর ও তার আশপাশের প্রায় অর্ধেক এলাকা নিমজ্জিত। বিশেষ করে কামালনগর, পুরাতন সাতক্ষীরা, সুলতানপুর, মুনজিৎপুর, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি, রসুলপুর, পলাশপোল, ইটাগাছা, কুখরালিসহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই মাসের পর মাস এসব এলাকা পানিতে ডুবে ছিল। এরপর ভাদ্র মাসের বৃষ্টি এসব এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। রোজগার করতে না পারায় অনেকের চুলো পর্যন্ত জ্বলছে না। পানি নিষ্কাশনে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বছরে এ জেলায় সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমতে পারে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে যেসব এলাকায় জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা নেই, সেসব এলাকায় দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু বাঁধ সামন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় ধরণের ক্ষতির শঙ্কা নেই।