এইচএসসির ঘোষিত ফল বাতিল করে পুনরায় সব বিষয়ের সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করছেন ফেল করা একদল শিক্ষার্থী। রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুর থেকে তারা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। রাত সোয়া ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল।
রাতে শিক্ষার্থীরা দুটি দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাদের প্রথম দাবি হলো- সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসএসসির শতভাগ নম্বর এইচএসসিতে দিয়ে নতুন করে ফলাফল তৈরি করা। আর দ্বিতীয় দাবিটি হলো- ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের পদত্যাগ।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একপর্যায়ে রাতে বোর্ডে অবরুদ্ধ চেয়ারম্যান পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন। আগামীকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেন।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি ভিন্ন। তারা বোর্ডের সামনে থেকে রাত ৯টার দিকে ঘোষণা দেন, বোর্ড চেয়ারম্যানের পদে থেকেই অধ্যাপক তপন কুমার সরকারকে প্রথমে এসএসসির শতভাগ নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করতে হবে। এতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সবাই পাস করে যাবে। তারপর তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার নিজের পদত্যাগের ঘোষণার কথা জানান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার পদত্যাগ চেয়েছে। আমি পদত্যাগ করলে যদি তারা আন্দোলন স্থগিত করে, তাহলে আমি পদত্যাগ করবো। আগামীকাল আমার পদত্যাগপত্র জমা দেবো।
বিষয়টি জানার পরই বেঁকে বসেন শিক্ষার্থীরা। তারা বোর্ড চেয়ারম্যানের পদত্যাগের আগে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে সবাইকে পাস করানোর নিশ্চয়তা চান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে থাকা সুমন হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যানের অধীনে বৈষম্যমূলক এ ফল প্রকাশ করা হয়েছে। উনি যদি দায়িত্বে না থাকেন এবং নতুন কেউ আসেন, তাহলে নতুন করে ফল তৈরি ও প্রকাশ করতে দেরি হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা চাই, উনার অধীনেই সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হোক। তারপর তিনি পদত্যাগ করুন।
রোববার বেলা ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সামনে জড়ো হন এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে তারা তালা ভেঙে বোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের কক্ষে চলে যান। সেখানে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়।
সেসময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন ছাত্রীসহ ১১ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। এ হামলায় বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানান।
এদিকে, সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার অনুরোধ করছেন। একই সঙ্গে রাতে সেখানে না থেকে বাসায় চলে যাওয়ার অনুরোধ করতেও দেখা যায়। তবে শিক্ষার্থীরা কারও কথা শুনতে নারাজ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
গত ১৫ অক্টোবর চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ফলাফলের তথ্যানুযায়ী—এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। তাদের মধ্যে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।