
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার, বাসস্ট্যান্ড দখল ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক সংঘর্ষে শতাধিক গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। এ সময় ১০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও ৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাজার ও বাসস্ট্যান্ড দখল নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনায় আটজনকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা যায়, উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া বাজার ও বাসস্ট্যান্ড দখল নিয়ে এলাকার সুলতান মাতুব্বরের সঙ্গে ইয়াকুব মাতুব্বরের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে ইয়াকুব মাতুব্বরের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুলতান মাতুব্বরের দলের জামাল মাতুব্বরের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনার জের ধরে ঘোষণা দিয়ে রোববার সকালে দুপক্ষের শত শত গ্রামবাসীর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় ভাঙ্গা-সদরপুর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে দুপক্ষের আহত হন ৪০ জন। এ সময় ১০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও পাঁচটি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা নারীসহ আটজনকে আটক করে।
অপরদিকে, সকালে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদি গ্রামে আমপাড়া নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সুয়াদি গ্রামের আলী মিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে দেলোয়ার মিয়ার সমর্থকদের সংঘর্ষে দুপক্ষের প্রায় ৪০ জন গ্রামবাসী আহত হন। আহতদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে আলী মিয়ার সমর্থক শাজাহান মিয়ার আম গাছ থেকে দেলোয়ার মিয়ার সমর্থক সোহাগের ছেলে তানভীর কয়েকটা আম পাড়ে। আমপাড়া নিয়ে গাছের মালিক শাহজাহান এসে তানভীরকে চড়থাপ্পড় মারে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেলোয়ারের লোকজন বেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলী মিয়ার লোকজন ওপর হামলা চালায়। পরে দুপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে, শনিবার রাতে ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, আজিমনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর মাতুব্বর ও একই গ্রামের ফারুক ফকিরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিকেলে বিরোধপূর্ণ জমি মাপার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ বৈঠক করা হয়। সালিশে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। রাতে পুনরায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়। আহতদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় দুটি মামলা করেছে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, গত দুদিন ধরে পুখুরিয়া, সুয়াদি ও আজিমনগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পুকুরিয়া এলাকা থেকে আটজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।