
বিশ্বপ্রযুক্তির অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ‘ভিভাটেক ২০২৫’-এ গর্বিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি অঙ্গনে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে বাংলাদেশের ১৪টি উদ্ভাবনী প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে নিজেদের উদ্ভাবন ও সম্ভাবনার প্রদর্শন নিয়ে। এ আয়োজন শুধু উদ্ভাবনের নয়, বরং বিশ্ব বিনিয়োগ ও সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বাংলাদেশের জন্য।
চার দিনব্যাপী এ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন উৎসব শুরু হয়েছে প্যারিসের পোর্ত দো ভের্সাই সম্মেলনকেন্দ্রে, যেখানে একত্রিত হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, স্টার্টআপ উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারকরা। ১১ জুন থেকে শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বাস্তব জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রয়োগ’, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বাস্তবায়নের পথচিত্র নির্দেশ করছে।
উদ্বোধনী দিনে প্রযুক্তি নেতৃত্ব : মেলার প্রথম দিনেই প্রযুক্তিবিশ্বে দৃষ্টি কাড়েন এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং। তিনি ঘোষণা দেন, জার্মানিতে তারা প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মেঘ-অবকাঠামো (এআই ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার) গড়ে তুলছেন। তার ভাষায়, আগামী দুই বছরে ইউরোপজুড়ে এআই সক্ষমতা দশগুণ বাড়বে।
এই মঞ্চে এক বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যিনি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ঘিরে আলোচনা করেন মাইক্রোসফট, ওপেনএআই, গুগল, প্যালান্টিয়ারসহ বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি নেতাদের সঙ্গে। আলোচনায় উঠে আসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা, ইউরোপের প্রযুক্তিগত স্বায়ত্তশাসন এবং সরকার ও নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি মূল্যবোধের বিষয়।
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রযুক্তি : বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তিমেলায় বাংলাদেশের নিজস্ব প্যাভিলিয়নে ১৪টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে, যারা নিজেদের উদ্ভাবন ও সমাধান প্রদর্শন করছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এনার্জি, বিডিটাস্ক, কোডমলি, ওয়াইলোলো, টাইকন।
প্রতিনিধিদলের ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য শুধু ‘শোকেসিং’ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য বিনিয়োগ, ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার দ্বার খুলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এআই অ্যাভিনিউ : এবারের সম্মেলনের বড় আকর্ষণ হিসাবে ছিল ‘এআই অ্যাভিনিউ’ নামের সেকশন, যেখানে বিশ্বের একশরও বেশি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা, শহর ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানি খাতে এআই-নির্ভর বাস্তবসম্মত সমাধান উপস্থাপন করেছে। দর্শনার্থীদের মতে, এ প্ল্যাটফরমটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবহারের বাস্তব রূপরেখা তৈরি করছে।
সংখ্যায় নজরকাড়া অর্জন : আয়োজক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এবারের ভিভাটেকে প্রায় ৯৫ হাজার অতিথি এবং ২,৫০০-এরও বেশি নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। অংশগ্রহণের এই বিশালতা ভিভাটেককে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ইভেন্টগুলোর একটিতে রূপ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিভাটেক এখন আর শুধু একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনী নয়, বরং এটি একটি দিকনির্দেশক প্ল্যাটফরম, যেখানে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নৈতিকতা, মানবিকতা এবং বৈশ্বিক সমতা নিয়ে পুনর্ভাবনা করা হচ্ছে।