
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আদেশকে ক্ষমতা-বহির্ভূত ঘোষণা করার একদিন পরই সেই আদেশ স্থগিত করেছেন দেশটির ফেডারেল আপিল আদালত। আপাতত শুল্ক আবার চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন এই আদালত। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ওয়াশিংটনের ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অব আপিলস এক জরুরি আদেশে এই রায় দেন।
শুক্রবার (৩০ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো, আদালতের আদেশে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, তবে মামলার বাদী পক্ষকে ৫ জুনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়, শুল্ক স্থগিত হলে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। আপিল আদালত এই যুক্তির ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে শুল্ক চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
হোয়াইট হাউজ আদালতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, আমরা যদি কোনো শুল্ক মামলায় হেরে যাই, তাহলে অন্য পথ খুঁজে বের করবো।
এর আগে বুধবার (২৮ মে) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৭৭ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (আইইইপিএ)’ আইনের আওতায় যেভাবে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপ করেছে, তা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। আইইইপিএ আইন মূলত নির্দিষ্ট দেশ, সন্ত্রাসী সংগঠন বা অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে ইরান বন্দি সংকট বা ১৯৯৫ সালে কলম্বিয়ার মাদক পাচারকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল।
সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রুস ফেইন জানান, আইইইপিএতে শুল্ক আরোপের কোনো উল্লেখ নেই। তার ভাষায়, শুল্ক বসাতে হলে প্রেসিডেন্টকে ১৯৬২ সালের ‘ট্রেড এক্সপানসন অ্যাক্ট’ অনুসরণ করতে হয়, যেখানে বাণিজ্যমন্ত্রীর পরিচালিত একটি জরিপের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো যেতে পারে।
ফেইন আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট শুল্ক বসাতে পারেন, তবে তা অবশ্যই ১৯৬২ সালের আইনের আওতায়। একটি নির্দিষ্ট পণ্যের ভিত্তিতে এবং উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুল্ক আরোপ করতে হবে। যদি এই প্রক্রিয়া পছন্দ না হয়, তবে প্রেসিডেন্টের উচিত কংগ্রেসে আইনি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য আদালতের ওই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির জন্য ছিল বড় ধাক্কা। কারণ ট্রাম্পের শুল্কনীতি এরই মধ্যে জনভোগান্তি বাড়িয়েছে ও যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি, দেশটির ক্রেডিট রেটিংও নেমে গেছে।
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’র ফেলো ও আইনজীবী পিটার হ্যারেল এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, যদি বাণিজ্য আদালতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে বহাল থাকে, তাহলে আমদানিকারকরা আইইইপিএ ভিত্তিক যেসব শুল্ক এরই মধ্যে দিয়েছেন, তা ফেরত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে সরকার আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরতের বিষয়টি আটকে রাখতে পারে।
জর্জটাউন ল স্কুলের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক গ্রেগ শ্যাফার বলেন, আইইইপিএ কখনোই প্রেসিডেন্টকে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না। এই আইন তো মূলত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করতেই প্রণয়ন করা হয়েছিল। এখন প্রেসিডেন্ট সেই আইনের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর শুল্কনীতি নতুন করে লেখার চেষ্টা করছেন।