অসৎ রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের পরিবর্তে টুরিস্ট ভিসায় মালদ্বীপে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বহু বাংলাদেশি।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত মালদ্বীপ থেকে ৩৫৬ জনেরও বেশি বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন ইমিগ্রেশন বিভাগ।
বাংলাদেশ হাইকমিশনার বলছেন, টুরিস্ট ভিসায় এসে মালদ্বীপে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। ভিসা চালু হলে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে মালদ্বীপে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
ভারত মহাসাগরের বুকে নীল জলরাশির দেশ মালদ্বীপ। প্রতিদিনই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশটিতে ঘুরতে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা।
তবে সম্প্রতি অনেক বাংলাদেশি দেশটিতে এসে পালিয়ে অবস্থান করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। পরে তাদের অনেকে যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন কাজে, যা পুরোপুরি মালদ্বীপের আইনবিরোধী বলে জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
গত আট মাসে পর্যটক ছাড়াও ৮৫টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৩০০ মানুষ জাল ভিসা নিয়ে মালদ্বীপ প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। যার মধ্যে ৩৫৬ জনই বাংলাদেশি বলে জানা গেছে।
এদের মধ্যে অনেকেই অসৎ রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের পরিবর্তে টুরিস্ট ভিসায় মালদ্বীপে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। একপর্যায়ে এদের গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন তাদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠায়।
বাংলাদেশি পর্যটকরা এভাবে মালদ্বীপে এসে পালিয়ে গেলে উল্টো তাদের এবং বসবাসরত প্রবাসীদের ঝুঁকি বাড়বে বলে জানান মালদ্বীপের বাংলাদেশি ব্যাবসায়ী গ্লোবাল রিচ গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা।
দেশটিতে বসবাসরত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডক্টর মুক্তার আলী লস্কর বলেন, ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করলে নিজে তো বিপদে পড়বে, সেই সাথে মালদ্বীপে থাকা এক লাখেরও অধিক প্রবাসী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই মালদ্বীপে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মালদ্বীপের বাংলাদেশ মিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. সোহেল পারভেজ সময় সংবাদকে বলেন, মালদ্বীপ একটি পর্যটননির্ভর দেশ।টুরিস্টদের জন্য মালদ্বীপের ভিসা সহজ থাকায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিনই ভ্রমণ করেন পর্যটকরা। আর এই সুবিধার অপব্যবহার করে বাংলাদেশের অনেক সহজ সরল মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে কিছু প্রতারক টুরিস্ট ভিসায় কাজের জন্য মালদ্বীপে নিয়ে এসে তাদের সাথে প্রতারণা করেন।
তিনি আরও বলেন, টুরিস্ট ভিসায় এসে মালদ্বীপে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি টুরিস্ট ভিসায় কাজের সন্ধানে মালদ্বীপ আসেন, তাহলে স্থানীয় আইন-শৃংখলাবাহিনী তাকে আটক করে জেল এবং জরিমানা দুটোই করবে।
এছাড়াও তিনি মালদ্বীপে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা চালু হলে ওয়ার্ক ভিসা নিয়েই মালদ্বীপে আসার আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি মালদ্বীপের শ্রমবাজার সংকট আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা আছে।