
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের পাঠানো চিঠি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (১০ জুন) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস ব্রিফিংকালে টিউলিপের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। একটা চিঠি এসেছে।’
এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরকালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এমপি ও সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত রোববার (৮ জুন) বিকেলে সময় সংবাদকে মুঠোফোনে শফিকুল আলম বলেন, ‘টিউলিপের কোনো চিঠি আমরা পাইনি। ৫ জুন থেকে আমরা ছুটিতে আছি।’
তবে এরই মধ্যে চিঠি পেয়েছেন বলে লন্ডনে প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম জানিয়েছেন।
চিঠির কোনো জবাব দিয়েছেন কিনা- এক সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠির বিষয়টি একটি লিগ্যাল ইস্যু এবং এটা আইনিভাবেই জবাব দেয়া হবে।’
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরকালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন যুক্তরাজ্যের এমপি ও সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক।
প্রতিবেদন মতে, টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের পর সৃষ্ট ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে লন্ডন সফরের সময় ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি। তার খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ সরকার থেকে সুবিধা নিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদকের পাশাপাশি গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচারিত হয়েছে যে, টিউলিপ বা তার মা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে’ অবৈধভাবে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি প্লট নিয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীরা দাবিগুলোকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন। টিউলিপ আরও দাবি করেছেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তার সাথে যোগাযোগ করেনি।
এদিকে যুক্তরাজ্য সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (১৩ জুন) তাদের বৈঠক হবে।
জনের মধ্যে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘মিটিংটার কোনো ফরম্যাট নাই। তবে যেহেতু তারেক রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং প্রফেসর ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, তো উনারা উনাদের মতো করে বসবেন, আলাপ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের ঘোষিত সময়, জুলাই চার্টার্ড, সংস্কার- এসব যেকোনো ইস্যু নিয়েই আলাপ হতে পারে।’
দুজনের বৈঠক হচ্ছে- সেটা নিশ্চিত করে প্রেস সচিব বলেন, ‘কী আলাপ হবে সেটা উনারা সিদ্ধান্ত নিবেন।’
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে লন্ডন পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।
সফরের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ব্যানারে এক দল ব্রিটিশ সংসদ সদস্য। লন্ডনের একটি হোটেলে এ সাক্ষাৎ হয়।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, সাক্ষাতে উভয় পক্ষ বিমান প্রযুক্তি ও সম্ভাব্য বিনিয়োগসহ পারস্পরিক আগ্রহের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
এ সময় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাজ্যে চার দিনের সরকারি সফরে তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন। এ সময় তিনি রাজা চার্লসের হাত থেকে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন।