বায়ার্ন মিউনিখের অস্ত্র দিয়েই শেষ পর্যন্ত বায়ার্ন-বধ করতে পারল বার্সেলোনা। নইলে যে কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।
ডাগ আউটে কোচ বদলেছে বার্সেলোনা, বদলেছে কত খেলোয়াড়। কিন্তু বায়ার্নের বিপক্ষে প্রায় ৯ বছর ধরে অধরা ছিল যে জয়, সেটার দেখা আর মিলছিল না। ২০১৪-১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বায়ার্নকে হারানোর পর ওদের বিপক্ষে যেন জিততেই ভুলে গিয়েছিল বার্সা।
অবশেষে বায়ার্নের বিপক্ষে বার্সেলোনা সেই জয় পেল আজ, অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। আর ৪-১ গোলের সেই জয়ের মূল কারিগর বায়ার্নেরই এক সময়ের কোচ হান্সি ফ্লিক, যিনি এখন বার্সেলোনার দায়িত্বে। এখানেই শেষ নয়, বার্সার গোলদাতার নামগুলো দেখুন। সেখানেও পাবেন এক সাবেক ‘বাভারিয়ান’কে—রবার্ট লেভানডফস্কি!
লেভাকে অবশ্য এই ম্যাচের মূল নায়ক বলা যাবে না। সেটা অবধারিতভাবে রাফিনিয়া। ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারই বায়ার্নের গোলমুখ খুলেছিলেন ম্যাচের একেবারে প্রথম মিনিটে। ৭৫ মিনিটে যখন দানি ওলমোকে সুযোগ দিতে তাঁকে তুলে নিলেন কোচ, রাফিনিয়ার হ্যাটট্রিক হয়ে গেছে তার বেশ আগেই। ৪৫ মিনিটে করেছিলেন নিজের দ্বিতীয় গোলটা, তিন নম্বরটা ৫৬ মিনিটে।
ইউরোপিয়ান কাপ নাম বদলে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ হওয়ার পর এই টুর্নামেন্টে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের এটা ১৫তম হ্যাটট্রিক। আগের দিনই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের হ্যাটট্রিকে এই তালিকায় বার্সাকে পেছনে ফেলে এককভাবে শীর্ষে উঠে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। একদিন পরেই আবার রিয়ালের পাশে চলে এল বার্সেলোনা।
আর শুধু রাফিনিয়াই বা কেন, দল হিসেবেও আজ দুর্দান্ত খেলেছে বার্সা। বিধ্বংসী পাল্টা আক্রমণের প্রদর্শনী, মাঝমাঠে পেদ্রির মাস্টারক্লাস আর আক্রমনভাগে রাফিনিয়ার সঙ্গে ইয়ামাল-জাদু। সেই তুলনায় বায়ার্নের রক্ষণভাগকে মনে হয়েছে বেশ ঢিলেঢালা। বয়স যে ৩৮ হয়ে গেছে, সেটা বারাবার বোঝা গেছে ম্যানুয়াল নয়্যারকে দেখে। হ্যারি কেইন ১৮ মিনিটে সমতা ফেরানোর আগে অবশ্য ম্যাচের ৭ মিনিটেই একবার বার্সার জালে বল পাঠিয়েছিলেন। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় সেই গোল।
চারটা গোল খেয়ে যাওয়ার পর বায়ার্ন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি চেষ্টা করেছেন কৌশল বদলে ব্যবধান কমাতে। বেঞ্চ থেকে জামাল মুসিয়ালা, কিংসলে কোমান, লেরয় সানে এবং লিওন গোরেৎস্কাকে নামিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই।
এই ম্যাচের আগে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের বায়ার্ন-বার্সেলোনা সেই ম্যাচটার কথা। লিসবনের সেই ম্যাচে বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে হারিয়েছিল বায়ার্ন। বার্সেলোনার ফুটবল ইতিহাসেই এখন যেটাকে অন্যতম বড় ‘বিপর্যয়’ মনে করা হয়। এরপর আরও চারবার বায়ার্নের মুখোমুখি হয়েছে বার্সা, জেতা তো দূরের কথা, একটা ম্যাচও ড্র করতে পারেনি!
প্রায় চার বছর আগের সেই ম্যাচে হান্সি ফ্লিক ছিলেন বায়ার্নের ডাগ আউটে। বায়ার্নের জার্সি গায়ে লেভা গোল করেছিলেন, করিয়েছিলেন। রাফিনিয়ার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকের দিনে এই দুজনকে নিয়েই অবশেষে বায়ার্ন-গেরো খুলল বার্সেলোনা।
এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে এটি বার্সেলোনার দ্বিতীয় জয়। সমান ম্যাচে বায়ার্নের এটি দ্বিতীয় হার।
একই রাতে স্পার্তা প্রাগকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। লাইপজিগের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছে লিভারপুল, আতলেতিকো মাদ্রিদকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে লিল, ইন্টার মিলান ১-০ গোলে জিতেছে ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে।