
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গ্রিসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস এ উৎসবের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস, এথেন্স প্রাঙ্গণে এক মনোজ্ঞ বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
দূতাবাস প্রাঙ্গণে বৈশাখী আলপনা, নববর্ষের সাজসজ্জাসহ বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত করা হয়। নারী-পুরুষ সবাই বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত হন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশ কয়েকটি স্টলে বাংলাদেশি খাবার, শাড়ি ও অলংকার সামগ্রী এবং আলপনা সহকারে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলেন। এতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও বিদেশি নাগরিকরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পাঞ্জাবী ও হাতে মেহেদি দিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন কয়েকজন বিদেশি নাগরিক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দূতাবাসের প্রথম সচিব, রাবেয়া বেগম আমন্ত্রিত অতিথি এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা তার শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাস পরিবারের সদস্য, গ্রিসস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্য, কূটনীতিক, এথেন্স সিটি কাউন্সেলর, গ্রিক ডিপ্লোমেট লাইফ ম্যাগাজিনের সম্পাদক, গ্রিক ছাত্র-ছাত্রী, ওয়েবস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ আরও অনেকে।
রাষ্ট্রদূত বাংলা নববর্ষের চেতনায় সাম্য, সম্প্রীতি এবং মানবতার জয়গান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির অন্যতম বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক উৎসব, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি সদ্য প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অংশে ছিল নানা রকম পরিবেশনা:
বাংলাদেশ দূতাবাস পরিবারের সদস্য ও দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের সম্মিলিত পরিবেশনায় গাওয়া হয় বর্ষবরণের জনপ্রিয় গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।

শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে এক মনোমুগ্ধকর ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করে দূতাবাস পরিবারের সদস্য আজরিন, মিম, সাব্বির, আয়ামিন, সাজিয়া, হামজা এবং রাফিফ।
ছোট্ট শিশু সোবা মনি আরজুকা এবং সামিয়া রহমান মিম আবৃত্তি করে বৈশাখী আবহে রচিত কবিতা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি পরিবেশনা মঞ্চস্থ করে আয়ামিন, শান, সাজিয়া, হামজা ও রাফি।
কুররাতুল আইন শাম্মী একক সংগীত পরিবেশন করেন। পল্লী বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুথি পাঠ পরিবেশন করেন সাইফুজ্জামান, হাফিজুর রহমান এবং আহমেদ শরিফ।
বিশেষ চমক হিসেবে এক গ্রিক নাগরিক মঞ্চে উঠে তিনটি বাংলা গান পরিবেশন করেন, যা উপস্থিত দর্শকদের মাঝে বিশেষ আনন্দের সৃষ্টি করে।
অনুষ্ঠানের শেষভাগে ‘দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এর উন্মুক্ত পরিবেশনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী এবং উপস্থিত সবাইকে সংগীতে মাতিয়ে তোলে। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এথেন্সের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে নববর্ষের উৎসব পরিণত হয় মিলনমেলায়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ মোট পাঁচটি (০৫) স্টল প্রদর্শিত হয়। এসব স্টলে বিভিন্ন ধরনের পিঠাখাবার, কাপড়সহ নানান ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের আয়োজন করা হয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দূতাবাসের স্টলে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার, দেশীয় পণ্য ও আকর্ষণীয় মেহেদী কর্ণারের আয়োজন ছিল, যা দর্শনার্থীদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশ দূতাবাস, এথেন্স বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করতে এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।