বৈরী পরিবেশে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল উত্তাল হয়ে পড়েছে। সঙ্গে চলছে পূর্ণিমার প্রভাব। সব মিলিয়ে আজ শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৮-৯ ফুট উচ্চতার ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে। সেই ঢেউয়ের সঙ্গে গা ভাসিয়ে আনন্দে মেতেছেন হাজারো পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সঙ্গে সৈকতে নেমেছেন স্থানীয়রাও।
সমুদ্রের পানিতে গোসলে নেমে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত লাইফগার্ড ও টুরিস্ট পুলিশ জানায়, আজ সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কলাতলী থেকে সুগন্ধা হয়ে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে নেমেছেন অন্তত দেড় লাখ মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ১ লাখ পর্যটক। কাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় লেগে থাকবে। আগামী রোববার সকাল থেকে পর্যটকের সংখ্যা কমতে পারে। দুর্গাপূজার চার দিন ছুটিসহ গত ১২ দিনে সৈকত ভ্রমণ করেন অন্তত সাত লাখ পর্যটক।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। সেই লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে সেটি বাংলাদেশের উপকূলেই আঘাত হানবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘ডানা’।
আজ সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজারের আকাশ পরিষ্কার রয়েছে, চলছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই।
সকাল ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যেও কয়েক হাজার পর্যটক গোসলে নেমেছেন। কেউ কেউ টিউবে গা ভাসিয়ে গভীর সাগরের দিকে ছুটছেন। লাইফগার্ড কর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে, হাত মাইকে প্রচারণা চালিয়েও পর্যটকদের পানি থেকে তুলতে পারছেন না। উত্তাল সমুদ্রের পানিতে গোসলে নামতে নিষেধ করে বালুচরে কয়েকটি লাল নিশানা উড়ানো হচ্ছে। সেদিকে কারও নজর নেই। লাল নিশানার আশপাশেই শত শত পর্যটক গোসলে নামেন।
সি-সেফ লাইফগার্ডের পরিচালক সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে আকাশ পরিষ্কার দেখালেও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়েছে। এক একটি ঢেউ ৮-৯ ফুট উঁচু। তার ওপর পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব আর পরপর দুটি ভূমিকম্প আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সমুদ্রে গোসলে নামতে নিষেধ করা হলেও কেউ মানছেন না।
দুপুরে সুগন্ধা পয়েন্টে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে গোসলে নামছিলেন ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী নাজমুল করিম। লাইফগার্ডের একজন তাঁকে জানালেন-সমুদ্র উত্তাল গোসলে নামলে জীবনের ঝুঁকি আছে। তখন নাজমুল করিম বললেন, আকাশ তো পরিষ্কার, বৃষ্টিও হচ্ছে না। গোসলে নামতে সমস্যা কী? হাজার হাজার পর্যটক গোসল করছেন; আমরা নামলে সমস্যা কী?
দেখা গেছে, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী সৈকতে জড়ো হয়েছেন অন্তত দেড় লাখ মানুষ। প্রচণ্ড গরমে কমবেশি সবাই উত্তাল সাগরের লোনাজলে শরীর ভিজিয়েছেন।
টুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও হোটেল মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত ১২ দিনে সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত সাত লাখ পর্যটক। পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের ৯৫ শতাংশ কক্ষে অতিথি থাকেন। ব্যবসাও হয়েছে ভালো। রোববার থেকে পর্যটকের বাড়ি ফেরা শুরু হবে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলগুলোর পর্যটকের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার।
সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, বৈরী পরিবেশের কারণে সাগরের কয়েকটি স্থানে গুপ্ত খাল ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গোসলে নামতে নিষেধ করে লাল নিশানা উড়ানো হচ্ছে। গোসলে নামার আগে পর্যটকদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। বালুচরে একাধিক চৌকি স্থাপন করে, তার ওপর বসে দুরবিনের মাধ্যমে গোসলে নামা পর্যটকদের নজরদারি করা হচ্ছে। কেউ স্রোতের টানে ভেসে যেতে চাইলে চৌকি থেকে নিচে থাকা লাইফগার্ডদের জানানো হয়। তাঁরা দ্রুত পানিতে নেমে পর্যটকদের বিপদ থেকে রক্ষা করছেন।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতে ভ্রমণ সমস্যা থাকায় এবার পর্যটকেরা কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন। নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর।