ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বুধবার কলকাতার মেয়ো রোডে এক সভায় বক্তব্য দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন টিএমসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছিল এ সভা। বক্তব্যে স্বভাবতই ওঠে আসে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ। সেখানে মমতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভুল ব্যাখ্যা করে কিছু গণমাধ্যম অপতথ্য ছাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এরপর তিনি নিজের বক্তব্য স্পস্ট করে তুলে ধরে আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট দেন।
পোস্টে মমতা দাবি করেন, সমাবেশে তিনি শিক্ষার্থী ও তাঁদের বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ন্যায্য দাবি করে তাঁদের প্রতি পূর্ণাঙ্গ সমর্থন প্রকাশ করেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোস্টে লিখেছেন, ‘গতকাল শিক্ষার্থীদের একটি সমাবেশে আমার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল গণমাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমি শিক্ষার্থীদের (মেডিকেল) আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমি তাদের আন্দোলন সমর্থন করি। তাদের আন্দোলন ন্যায্য। আমি তাদের কোনো ধরনের হুমকি দিইনি, যদিও কিছু মানুষ আমাকে এ ধরনের অপবাদ দিচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।’
মমতার দাবি, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কারণ, তারা গণতন্ত্রকে হুমকি দিচ্ছে। তারা পশ্চিমবঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘আমি বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কারণ, ভারত সরকারের মদদে তারা আমাদের রাজ্যের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের সমর্থনে তারা অনাচার তৈরির অপচেষ্টা করছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আমার আওয়াজ তুলেছি।’
গতকাল সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে মমতা ‘ফোঁস করা’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। এক্সে দেওয়া পোস্টে সেই বিষয়েরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ২৮ আগস্ট তিনি তাঁর বক্তব্যে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের উদ্ধৃতি থেকে এ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন।
মমতা বলেন, ‘এই মহাসাধক বলেছিলেন, মাঝে মাঝে আওয়াজ তুলতে হয়। যখন কোনো অপরাধ ও আইনের ব্যত্যয় ঘটে, তখন প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে হবে। সেই জায়গা থেকে আমি আমার বক্তৃতায় রামকৃষ্ণের সেই উদ্ধৃতি থেকে সরাসরি তুলে ধরেছি।’
মমতার পোস্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন, ‘অনেকে মনে করেন, এটা (পশ্চিমবঙ্গ) বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি, তারা আমাদের মতো কথা বলে। আমাদের সংস্কৃতিরও মিল আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ও ভারত দুটি আলাদা দেশ। মোদি বাবু এখানে (পশ্চিমবঙ্গে) আগুন লাগাতে তাঁর দলকে ব্যবহার করছেন। মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, তাহলে আসাম, উত্তর-পূর্ব ভারত, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, এমনকি দিল্লিও আগুনে পুড়বে। আপনার গদি (নরেন্দ্র মোদি) আমরা নড়বড়ে করে দেব।’